খাওয়া, কথা বলা, বসা বা হাঁটা শেখার মতোই শিশুর আরেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ টয়লেট করা। ১৮ মাস বয়সের পর থেকেই শিশুকে টয়লেট করার প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ২২ থেকে ৩০ মাসের মধ্যে এটা শিশুর পুরোপুরি শিখে ফেলা উচিত।

শিশুর টয়লেট প্রশিক্ষণের কিছু কৌশল

বাচ্চার পটি প্রশিক্ষণ কিন্তু অনেক ধৈর্যের ব্যাপার। তাই মা-বাবাকে এর পেছনে লেগে থাকতে হবে। তাড়াহুড়া না করে ধীরে ধীরে তাকে এই ব্যাপারে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। কখন ও কীভাবে মলত্যাগ আর প্রস্রাব করতে হবে, ছোটদের তা শেখানোর কিছু কৌশল রয়েছে।

১. প্রথমেই শিশুকে বাথরুম বা পটি সিট চেনাতে হবে, এর ব্যবহার সম্পর্কে বোঝাতে হবে। পটি করা যে খুব সাধারণ ও স্বাভাবিক একটা বিষয়, এটা বোঝানোর চেষ্টা করুন। গল্পের ছলেই তাকে এই বিষয়গুলো জানানো যায়। তার ইচ্ছায় তাকে বসতে ও উঠতে দিন।

২. সঠিক পোশাক নির্বাচন করুন। প্যান্টে যদি চেইন থাকে, তাহলে সে একা খুলতে বা লাগাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে না। ইলাস্টিক দেওয়া প্যান্ট সবচেয়ে ভালো, এ ধরনের প্যান্ট ঝটপট গোড়ালি পর্যন্ত নামিয়ে নেওয়া যায়। প্রস্রাব ও পায়খানার সময় প্রথম কয়েক দিন আপনি তাকে প্যান্ট পরতে ও খুলতে সাহায্য করুন। দেখবেন আস্তে আস্তে সে নিজে নিজেই এটা করতে আগ্রহী হবে।

৩. প্রতিবার শিশুকে প্রশংসা করুন ও উৎসাহ দিন। টয়লেট পটে পটি করলে তাকে একটু আদর করে দিন। খেলনা বা চকলেটের মতো ছোট্ট পুরস্কারও দিতে পারেন। তাহলে এই বিষয়ে সে আরও আগ্রহ পাবে।

৪. শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। অনেক বাচ্চা একদমই কমোডে বা পটে বসতে চায় না, তাদের জন্য নতুন কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে। মা–বাবা নিজে টয়লেটে বসে দেখাতে পারেন বা পটে পছন্দের পুতুলটি বসিয়ে দেখাতে পারেন। এতে করে সে দেখে শিখবে, তার আগ্রহ তৈরি হবে।

৫. পরিচ্ছন্নতাও শেখাবেন। একদম ছোট শিশুকে আপনাকেই পরিষ্কার করে দিতে হবে কিন্তু ক্রমান্বয়ে পরিষ্কার করাটা তার নিজেকেই শিখতে হবে। পরিষ্কার করানোর সময় প্রতিটি ধাপ তাকে মুখে বুঝিয়ে বলুন। বাচ্চার হাত–পায়ে কোনো নোংরা লাগলে হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলুন।

৭. পট হাতের নাগালে রাখুন। টয়লেট পট এমন জায়গায় রাখতে হবে, যাতে সে সহজেই নাগাল পায়। বেগ পেলে বাচ্চা যেন ইঙ্গিত করে আপনাকে দেখাতে পারে বা নিজেই দ্রুত গিয়ে বসতে পারে।

মনে রাখবেন, অনেক শিশুর হাঁটা শুরু করতে, বসতে বা নিজে নিজে পটি করাতে অভ্যস্ত হতে কিছুটা সময় লাগে। তারপরও যদি আচরণে অস্বাভাবিক কিছু খেয়াল করেন, দেরি না করে শিশু চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।

লেখক: চিকিৎসক, শিশুরোগ বিভাগ, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, মগবাজার, ঢাকা।