চড়ুই পাখির বাসা

0
722

চড়ুইটা রোজ এসে বসত অমিতের জানালায়। কোথা থেকে আসত, কেন আসত, অমিত জানে না। সে জানে চড়ুইরা বাসা বানায় মানুষের বাড়ির ঘুলঘুলিতে। অথবা কোনো স্টোর রুমে। অর্থাৎ মানুষের কাজে লাগে না এমন পরিত্যক্ত জায়গায়। সে নিজে অবশ্য দেখেনি। এমনকি ওর বড় ভাই সাবিত যখন বলল, ওদের মহাখালির বাসার ঘুলঘুলিতে চড়ুইয়ের বাসা ছিল, অমিত অবাক হয়েছিল খুব। মানুষের বাড়িতে পাখির বাসা বলে নয়। অমিত বুঝতে পারছিল না ঘুলঘুলি জিনিসটা ঠিক কী।

‘বাসার জানলার উপর একধরনের খোপের মতো থাকত। ফাঁকা-ফাঁকা। জালির মতো না, দুইটা ফ্রেম, প্রত্যেকটায় ফোকর থাকত আর মাঝখানে ফাঁপা,’ বলেছিল সাবিত।

 ‘কেন থাকত?,’ অমিত জিজ্ঞেস করেছিল।

‘তুই তো এখনো এসব পড়িস নাই। দেখি সহজ করে বোঝাতে পারি কি না’, বলে সাবিত শুরু করল, ‘বাতাসের ভর আছে জানিস তো?’

মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল অমিত। সাবিত আবার বলল, ‘বাতাস গরম হলে এর ভর কমে যায়। তখন গরম বাতাস ওপরের দিকে ওঠে। ঘুরঘুরি থাকলে ওই গরম বাতাস সেখান দিয়ে বের হয় আর ঠান্ডা বাতাস জানলা দিয়ে আসার সুযোগ পায়।’

অমিত বেশ বুদ্ধিমান। সে ছোটদের ম্যগাজিন পড়ে। অনেক গল্প জানে। সেসব গল্পে বিজ্ঞানের অনেক কথাও থাকে। তাই সাবিতের কথা কিছুটা হলেও বুঝতে পারে। বাতাস গরম হলে হালকা হয়ে ওপরে থাকা ঘুলঘুলি দিয়ে বাইরে চলে যেত। ভারী ঠান্ডা বাতাস তাই ফাঁকা ঘরে চলে আসতে পারত। কিন্তু সে বুঝতে পারে না যে সেই ঘুলঘুলি গেল কোথায়!

সাবিত তখন বলে, ‘এসি থাকলে তো এরকম কোনো ফাঁকা রাখা যায় না। এখন সব বাসার ডিজাইন এমনভাবে করে যেন এসি রাখা যায়। তাই ঘুলঘুলি বাদ দিলো। আরও আছে রে অমিত। সে সময় ঘুলঘুলিতে যেন পানি না ঢোকে তার জন্য একটা ছাদ দেওয়া হতো জানলার ওপর। সানশেড। লোকে বলত সানসেট। হাহাহা। এখনও আছে কিন্তু আগে আরও চওড়া হতো। ওখানেও অনেক পাখি এসে বসত। কাক এসে কা-কা করত। বৃষ্টির সময় এসে বসত শালিক, চড়ুই।’

বড় ভাইয়ের কথা শুনতে শুনতে অমিত যেন সেই সময়টা অনুভব করতে পারে। ও শুনেছে চড়ুইরা ঠোঁটে করে খড় এনে বাসা বানাত। খড়ের সাথে থাকত কাগজটাগজ আরও টুকিটাকি। পাখিদের বাসায়ও তো আসবাব লাগে। ওরা সেসব বানাত হয়তো নিজের মতো করে। সাবিতের কাছে শোনে সবচেয়ে সুন্দর বাসা বানায় বাবুই পাখি। অমিতও দেখেছে বইয়ে, তালগাছে বানানো সেই বাসা। ‘তবে চড়ুইয়ের বাসা অত সুন্দর না। ওরাও শহুরে পাখি তো, শিল্প করে সময় নষ্ট করতে পারত না। এই জন্য ফোকর খুঁজে সহজে বানাত বাসা’, বলে হাসে সাবিত।

সাবিতের পৃথিবীটা অমিতের চেয়ে একটু অন্যরকম। সে এই পৃথিবীতে এসেছে অমিতের কয়েক বছর আগে। তার বেড়ে ওঠার সময় শহরটা অন্যরকম ছিল। অমিত ছোট। শহরটা পেয়েছে সে আরেক রকম। কাক দেখেছে কিন্তু খুব সামান্য। চড়ুইদেরও দেখা পাওয়া যায় না। সব কমে গেছে। সাবিত বলে শহরে দূষণ বেড়ে যাওয়ার কারণে এই অবস্থা। পাখিরা প্রকৃতির সন্তান। ওরা এই দূষণের মধ্যে থাকতে পারে না। মরে যায় খুব আস্তে আস্তে। 

অমিতও দেখেছে, শহরে কোনো পাখি নেই। একবার সে গিয়েছিল চিড়িয়াখানায়। কিন্তু খুব কষ্ট হয়েছিল। বাঘের কথা ও পড়েছে বইয়ে। দেখেছে ন্যাশনাল জিয়োগ্রাফিক চ্যানেল আর ডিসকভারিতে। কী দুর্দান্ত এক একটা প্রাণী। বাঘ তো এক ঝটকায় মেরে ফেলে হরিণ।

কিন্তু চিড়িয়াখানার বাঘের সাথে কোনো মিল নেই। বাঘটা খুব ক্লান্ত। মনে হলো অসুস্থ। বইয়ে পড়া রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের সঙ্গে চিড়িয়াখানার বাঘের কোনো মিল নেই। ওদের গলির একটা কুকুরকে কারা যেন গায়ে কালো ডোরা এঁকে দিয়েছিল। চিড়িয়াখানার বাঘের চেয়ে সেই কুকুরটাকেই সবল মনে হয়েছিল অমিতের।

তবে অমিতের বন্ধুরা পশু পাখি খুব পছন্দ করে। তার বন্ধু সুপন একটা বিড়াল পোষে। রিয়ার আছে একটা খরগোশ, নাম তার সুড়সুড়। এমন নাম কেন দিয়েছে জিজ্ঞেস করলে বলেছিল, ‘খালি একটু পরপর আমার গায়ে উঠে যায়। সুড়সুড়ি দেয়। তাই সুড়সুড়।’ রিয়ার বাসায় গিয়ে অমিত দেখেছিল সুড়সুড় আসলেই এমন করে। 

রাজীবের কুকুরের নাম গ্রিগো। গ্রেগরকে ছোটো করে রাজীবের বাবা এ নাম দিয়েছে। আমরিনের একটা পমেরিয়ান আছে। শিবুর আবার পছন্দ মুরগি পোষা। সাতটা বাচ্চা মুরগি তার। অনন্যার আছে একটা টার্টেল। পানিতে থাকে, আবার অনন্যার সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়।

কিন্তু এই পোষা-পুষ্যির বিষয়টা খুব বেশি ভালো লাগে না অমিতের। মনে হয় ওদের যেন আটকে রাখা হচ্ছে। যেমন বিকেলে খেলার সময় অমিতকে বাইরে যেতে না দিলে ওর অনেক কান্না পায়। এই তো গত সপ্তাহে। ইংরেজির একটা সিটি ছিল বলে মা ওকে বাস্কেটবল খেলতে দিলো না। সারা বিকাল সে গুম হয়ে ছিল। সাবিত এলো কার্ল চিপস নিয়ে। অমিতের ফেভারিট কিন্তু সে ফিরেও তাকাল না। অনন্যার কচ্ছপটাকে গোল কাঁচের বয়ামে দেখলে অমিতের মনে হয় কচ্ছপটাও বাইরে কোথাও যেতে চায়। কিন্তু যাওয়ার কোনো উপায় নেই তার।

চড়ুইটাকে ধরার কথা বলেছিল আমরিন। অমিতদের ওপরতলায় থাকে ওরা। অমিতের কাছ থেকে কমিকস নিতে এসে দেখেছিল ঠিক অমিতের জানলার গ্রিলেই বসে আছে পাখিটা। যেন ওদের সঙ্গে এখন কথা বলতে শুরু করবে। আসলে তো তা হয় না। আমরিন বেশ অবাক হয়েছিল পাখিটা দেখে। ‘এটা কী পাখি রে অমিত? চড়াই না?’, জিজ্ঞেস করেছিল সে।

‘চড়ুই, চড়াই যে কোনোটাই বলতে পারো। ইংরেজিতে বলে স্প্যারো। ওরা ঘরের মধ্যে বাসা বানায়। মানে মানুষের ঘরে’, বলেছিল অমিত।

আমরিন ওর বড় বড় চোখ ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে দেখছিল। একবার দেখছিল অমিতকে, আরেকবার চড়ুইটাকে। তখনই বলল, ‘ওকে ধরে ফেল। একটা খাঁচায় রেখে দে।’

অমিতের ইচ্ছে করেনি একদম। সাতদিন হয় চড়ুইটা আসে। বসে থাকে। চলে যায়। ওর মনে হচ্ছিল চড়ুইটার সাথে একটা যোগাযোগ হয়ে গেছে। সেটা ভাঙতে একদম ইচ্ছা করে না। রাইম পড়তে পড়তে ও চড়ুইটাকে দেখে। কোনো নামও দেয়নি। যেমনটা দিয়ে থাকে তার বন্ধুরা।

আমরিন বলে ওর কাজিন রেবেকার একটা টিয়া আছে। পাখিটা কথা বলতে পারে। আমরিনকে দেখলেই নাকি, ‘ওয়েলকাম আমরিন’ বলে ডাকে।

‘আমি তো শুনেছি এরকম করে কথা বলে ময়না’, বলে অমিত।

ওর ভুল ভাঙিয়ে দেওয়ার মতো করে আমরিন বলে, ‘আরে টিয়াও ডাকে এমন করে। ওরা কথা বলতে পারে।’

কিন্তু অমিত জানে যে পাখিরা আসলে মানুষের ভাষায় কথা বলতে পারে না। ওকে কেউ শিখিয়ে দেয়নি। নিজেই বুঝতে পারে। এই যে মাঝে মাঝে না বুঝে রাইম মুখস্থ করে, পাখিরাও অমন স্বর নকল করে মুখস্থ বাক্য বা শব্দ বলতে পারে। ওটাকে আসলে ‘কথা বলা’ বলা যায় না। কথাই যদি বলতে পারত তাহলে তো প্রশ্ন করত বা উত্তর দিত। নিজে থেকে কথা বলত সবার সাথে। আমরিন যেমন কলকল করে কথা বলে।

কলকল শব্দটাও শুনেছে অমিত। পাখিদের হয় কূজন, কলকাকলি। কী সুন্দর দুটো শব্দ। গত বছরের শেষের দিকে গ্রামে গিয়েছিল ওরা। সকালে ওর ঘুম ভেঙেছিল একঝাঁক পাখির ডাকে। কলকাকলি কাকে বলে সেটা অমিত বুঝেছিল ওই দিন। কয়েক রকমের পাখি একত্রে ডেকে উঠেছিল। সে জানে না কোন কোন পাখি ছিল কিন্তু একাধিক স্বর সে শুনেছে।

তারপর জেনেছিল সকালে পাখিরা ডাকে একরকম, সন্ধ্যায় আরেক রকম। কিংবা সব পাখি সব সময় ডাকে না। কিছু পাখি কেবল রাতে ডাকে। মা বলেছিল ওগুলো রাতজাগা পাখি। অমিত একবার বইয়ে ধনেশ পাখির নাম পড়েছিল। ধনেশ ডাকে কি না সে জানে না। দাদুবাড়ির পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে মাছরাঙা দেখতে দেখতে ধনেশ পাখির কথা মনে পড়েছিল। 

বাড়ির জানালায় চড়ুই দেখে সেইসব পুরোনো কথা মনে পড়ছিল অমিতের। আরও অনেক কিছু মনে পড়ে। স্কুল থেকে ফিরছিল সে। তখন দেখল পথের পাশে একটা খাঁচা নিয়ে একজন লোক পাখি বিক্রি করছে। স্কুল ভ্যানের গ্রিলের ওপাশ থেকে দেখল একেকটা পাখির একেক রঙ। পাখিগুলো একই কিন্তু ওদের উপর আলাদা করে রং দেওয়া হয়েছে। ভ্যানে বসা অন্য বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে ওর মনে হলো, ওরা এক একজন এমনই রং মাখা পাখি। একটা খাঁচার মধ্যে বন্দী।

ফিরে এসে সেদিন চড়ুইটাকে দেখল না। কিন্তু সে কিছুক্ষণের ব্যাপার। জামা প্যান্ট বদলে ব্যালকনিতে গিয়েই পাখিটার দেখা পেল সে। একা নয়। সাথে আরও কেউ আছে। ওদের ব্যালকনির কোণে একটা স্টোর মতো করা আছে ওপরের দিকে। সেখানেই একটা ফাঁকা জায়গা পেয়ে বাসা বানানো শুরু করেছে চড়ুইটা। সাথে যারা এসেছে, তারা কি ওর পরিবার? নাকি বন্ধুবান্ধব? অমিতের মনে হয় সাবিত এলে এই প্রশ্নটা করতে হবে। সাবিত সব জানে। অনেক পড়ে সে। আর কত কথা বলে, অমিত সব বোঝে না। কিন্তু ভাইয়ের অনেক কথা শুনতে ওর ভালো লাগে। কথা বলার সময় চশমাটা নাকে মাঝে মাঝে সেটে দেয় সাবিত। ভাইয়াকে কিশোর স্যারের মতো মনে হয়। এত সব ভাবতে ভাবতে অমিত দেখল দুটো পাখি মুখোমুখি বসে যেন কথা বলছে।

আষাঢ়ের বৃষ্টিতে জুবুথুবু শহর। কোথাও পানি জমে গেছে রাস্তায়। যাওয়ার উপায় নেই বাড়ির বাইরে। দুদিন হলো স্কুলে যাচ্ছে না অমিত। পাখিরাও বেরুচ্ছে না বাসা ছেড়ে। অমিতের ভেবে অবাক লাগে, ঘরের মধ্যে আরেকটা ঘর। এখন এই পাখিগুলো ওদের প্রতিবেশী। 

কিন্তু খাবার নেই পাখিদের। অমিত মাঝে মাঝে চাল ছড়িয়ে দেয়। পাখিরা কখনো আসে, কখনো আসে না। ভাত ছিটিয়ে দেয়। পোকা মাকড় তো সে আনতে পারে না। অমিতের মনের মধ্যে কেমন একটা কষ্ট হয়। প্রতিবেশী শব্দটা তাকে কষ্ট দেয়।

কোভিডের সময় ওর ছোট বুদ্ধিতেও দেখেছে মানুষের কত কষ্ট। ওর বন্ধুরা পশুপাখিদের যত্ন করে, দানা খাওয়ায়, কিন্তু কোভিডের সময় মানুষেরা খাবারের ওভাবে এখান থেকে সেখানে চলে গেল। তাদেরকে অনেকে খাবার দিয়েছে, অনেকে দেয়নি। মানুষকে তো চাল ছড়িয়ে দেওয়া যায় না। বাসি ভাতও দেওয়া যায় না সবাইকে। তাই অরণ্যরা চলে গিয়েছিল শহর ছেড়ে। অরণ্যের বাবার চাকরি চলে গিয়েছিল বলে। অরণ্যের একটা পোষা ময়না ছিল। যাওয়ার আগে সে ছেড়ে দিয়েছিল আকাশে। ইফতিও চলে গিয়েছিল। কিন্তু ইফতির কোনো ‘পেট’ ছিল না। 

অমিতের তাই মনে হয় পাখিগুলোকে কোনো কিছুর অভাব থেকে দূরে রাখতে হবে। নিশ্চয়ই ওদের বাসাতেও একটা বাবা আছে। একটা মা আছে। আছে একটা সাবিত আর অমিত। ও দেখেছে ঠিক চারটা চড়ুই থাকে ওখানে, একটা বাক্সের মধ্যে। ঠিক যেমন ওরা থাকে ছয় তলার তিন রুমের এই বাসাতে। মা তো মাঝে মাঝেই বাসাটাকে চড়ুই পাখির বাসা বলে। অমিতরা যেমন নিজের বাসা গুছিয়ে রাখে, চড়ুইরাও তাই করে নিশ্চয়ই! 

অমিতের মন ভালো হয়ে যায় যখন দেখে একটা চড়ুই মাত্রই ভিজে এসে বসল ব্যালকনির গ্রিলে। এই বুঝি ফিরল অফিস থেকে। ঠিক সেই সময়েই কলিং বেল বাজলে অমিত দৌড়ে গেল। দরজা খুঁজে দেখে  ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে আছে বাবা। পেছনে সাবিত। তার চুল বেয়ে পানি পড়ছে। ছোট্ট অমিত আরও ছোট্ট করে হেসে ফেলে। 

ঠিক করেছে এবার স্কুল ম্যাগাজিনের জন্য একটা ছবি আঁকবে—চড়ুই পাখির বাসা।

Source:

البحث
الأقسام
إقرأ المزيد
Health
Stratos Male Enhancement [Official News] – Benefits, Ingredients & Latest Price Update
Stratos Male Enhancement Spray is a potent male enhancement formulation designed to enhance...
بواسطة ZentraSlim Korea 2025-02-23 15:40:17 0 158
Networking
জাপানের ভিসা করুন সহজে
🛑নতুন জাপান ভিসা আবেদন পদ্ধতি বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা ফি লাগবেনা শুধু vfs ১৯০০ টাকা সার্ভিস ফি...
بواسطة Visa Aid Limited 2024-11-12 15:26:32 0 3كيلو بايت
Health
How long does Titan Force Male Enhancement Gummies Take Yo Produce results?
In the realm of male enhancement supplements, Titan Force has emerged as a significant...
بواسطة Smart Hemp 2025-02-22 18:33:40 0 2كيلو بايت
Health
GlucoTonic 60ml Price: The Natural Way to Feel Younger, Healthier and More Energetic
GlucoTonic is a dietary update that is needed to help with peopling control their glucose...
بواسطة Gluco Tonic 2025-02-01 09:24:26 0 1كيلو بايت
أخرى
Razor Boxes: Essential Packaging for Razor Products
In today’s market, packaging plays a vital role in branding and product protection. For...
بواسطة Subhan Awan 2024-11-13 00:15:33 0 2كيلو بايت