Sponsored

কর্মী পাঠানোয় জালিয়াতিতে ছয় এজেন্সি ও ৯ কর্মকর্তা

0
4K

দৃশ্যপট সংযুক্ত আরব আমিরাতে একটি পার্ক এটি। সেখানে কাজ আর আশ্রয়হীন এক যুবক তিন লাখ টাকা খরচ করে দুবাই এসেছেন। এখন বেকার। কোন চাকরি নেই, নেই মাথা গোজার ঠাই। অথচ কথা ছিল দুবাই আসার পরই ভাল বেতনে চাকরি পাবেন। চিত্রটা গেল কয়েক মাসের।

ধীরে ধীরে আর আমিরাতে কর্মী যাওয়া বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে কর্মহীন মানুষের সংখ্যাও। অথচ প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় তাদের কাজ আছে এমন প্রমাণ পত্র হাতে নিয়ে দেশ থেকে দিয়েছিলো বিএমইটির স্মার্ট কার্ড বা ছাড়পত্র। যা দেখিয়ে সব কর্মীই বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন ছেড়েছিলেন। 

আমিরাত বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান শ্রমবাজার। ২০১৫ সালের পর টানা পাঁচ বছর দেশটির শ্রমবাজার বন্ধ ছিলো বাংলাদেশিদের জন্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দফা সফরে গিয়ে কর্মী নিতে অনুরোধ করেন। ২০২০ সালে বাংলাদেশিদের নিয়োগ দেয়া শুরু করে আমিরাত। 

তবে এখনও চাকরির ভিসা দিচ্ছে না। দেশটিতে ভিজিট ভিসায় গিয়ে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করতে পারেন বাংলাদেশিরা। তদন্তে উঠে এসেছে কেন দুবাই যাবার পর কর্মীরা কাজ তো দূরের কথা কোন কিছুই না পেয়ে এখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। 

বৈদেশিক কর্মসংস্থানে অনিয়ম ঠেকানোর দায়িত্বে থাকা সরকারি সংস্থা জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোই (বিএমইটি) ঠকাচ্ছে বিদেশগামী কর্মীদের। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের করা এক তদন্ত প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। 

যেখানে সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সিন্ডিকেট জালিয়াতি করে সংযুক্ত আরব আমিরাতগামী কর্মীদের ভুয়া বহির্গমন ছাড়পত্র বা স্মার্ট কার্ড দিয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ অনুমতি ছাড়াই, অর্থাৎ চাকরি না দিয়ে রিক্রুটিং এজেন্সি ও দালালরা ভুয়া স্মার্ট কার্ডে কর্মীদের বিদেশ পাঠিয়েছে। বিএমইটির ৯ কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং ছয় রিক্রুটিং এজেন্সি জালিয়াতিতে জড়িত বলে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেছে। 

তবে তদন্ত হয়েছে সীমিত আকারে। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুল কাদেরের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। তাদের তদন্তে প্রমাণ হয়েছে, আরব আমিরাতে ২ হাজার ৯৬০ জন কর্মীর নিয়োগ অনুমতির বিপরীতে ৬ হাজার ৯৩৮টি স্মার্ট কার্ড দিয়েছে বিএমইটি। 

তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, তিন হাজার ৯৭৮টি স্মার্টকার্ড দেওয়া হয়েছে ন্যক্কারজনক ও অকল্পনীয় জাল-জালিয়াতি করে। অভিযোগ আছে, প্রতিটি ভুয়া কার্ডের জন্য দুই থেকে তিন লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছে অভিযুক্তরা।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্মার্টকার্ড জালিয়াতি সিন্ডিকেটে জড়িত আছেন বিএমইটির সিস্টেম অ্যানালিস্ট সাইদুল ইসলাম। জনশক্তি জরিপ কর্মকর্তা ইমারত হোসেন মোল্লা, বহির্গমন শাখার প্রধান সহকারী শামীমা ফেরদৌসী, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর সাইফুল ইসলাম,সহকারী পরিচালক শেলীনা আক্তার, লিটন কান্তি চৌধুরী, উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, পরিচালক হাসান মাহমুদ ও পরিচালক মিজানুর রহমান ভূঁইয়া। 

প্রতিবেদনে নাম এসেছে বিএমইটির মহাপরিচালক শহীদুল আলমেরও। ২৫ পৃষ্ঠার সারাংশসহ তদন্ত প্রতিবেদনটি ৫০৭ পৃষ্ঠার। আটটি এজেন্সির নিয়োগ অনুমতির বিপরীতে স্মার্টকার্ড ইস্যুর জালিয়াতির তদন্তে ছয়টির বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া গেছে। 

এগুলো হলো- মাহবুব ইন্টারন্যাশনাল (লাইসেন্স নম্বর-২৮৬), হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (লাইসেন্স নম্বর-৪৫২), ডালাস ওভারসিজ (লাইসেন্স নম্বর-৫৩২), আল মোবাররক ইন্টারন্যাশনাল (লাইসেন্স নম্বর-৫৪২), এম আক্তার অ্যান্ড সন্স (লাইসেন্স নম্বর-১২৮৪) এবং আল ফাত্তাহ ইন্টারন্যাশনাল (লাইসেন্স নম্বর-১৫০১)।

বিএমইটির মহাপরিচালক শহীদুল আলম তার জবানবন্দিতে বলেছেন, মহাপরিচালকের কাছে নথি অনুমোদনের জন্য আসার আগে আরও পাঁচটি টেবিলে যায়। অবৈধভাবে স্মার্টকার্ড ইস্যুর বিষয়ে তাকে কখনও জানানো হয়নি। জানালে ব্যবস্থা নিতেন।

মন্ত্রণালয় অবশ্য ব্যাপারটি তদন্তাধীন থাকায় বিস্তারিত কিছুই বলছে না। মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, অন্যান্য নিয়োগ অনুমতির ক্ষেত্রে আরও কত স্মার্টকার্ড দেওয়া হয়েছে এর হিসাব নেই। তবে সংখ্যাটি অনেক বড়। ২০২১ সালে ২৯ হাজার ২০২ জন এবং ২০২২ সালে আগস্ট পর্যন্ত ৭০ হাজার ২০৩ বাংলাদেশি কর্মী আমিরাতে গেছেন। 

অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও অবৈধভাবে স্মার্ট কার্ড দেওয়া হয়েছে কিনা, তার তদন্ত হয়নি। তদন্তের জবানবন্দিতে কর্মকর্তারা বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই টাকা জমা নেওয়ার নম্বর দিয়ে স্মার্ট কার্ড প্রিন্ট দেওয়া সম্ভব। 

কিন্তু অপারেটরের পাসওয়ার্ডের বিপরীতে তা জমা হয়। ফলে ধরা পড়তেই হবে। রিক্রুটিং এজেন্সির জালিয়াতির বিষয়ে তদন্তে বলা হয়েছে, তাদের আবেদনের নথিতে অনুচ্ছেদ নম্বর ও পৃষ্ঠা নম্বরে অনেক কাটাকাটি রয়েছে। নথি থেকে অনেক নোটশিট সরানো হয়েছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলছে, জনশক্তি খাতে যে দুর্নীতির যে সব তথ্য মিলেছে, তা মানবপাচারের শামিল। কেননা, মিথ্যা তথ্য দিয়ে মন্ত্রণালয় এবং এজেন্সি যৌথভাবে কর্মীদের বিপদে ফেলেছে।

সিআইডি গত মার্চে ভুয়া স্মার্টকার্ডের মাধ্যমে বিদেশে জনশক্তি রপ্তানিতে জড়িত পাঁচ দালালকে গ্রেপ্তার করে। তবে এ অপরাধে এখন পর্যন্ত কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আর এই রিপোর্টও অধিক তদন্তের জন্য ঘোরাঘুরি করছে টেবিলে টেবিলে। 

 

Like
1K
Sponsored
Search
Recomended
Categories
Read More
Fitness
জাপানিদের স্লিম বা ফিট থাকার যত সব রহস্য
মুটিয়ে যাওয়া এখন উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে মোটামুটি জাতীয় সমস্যা। এই হার বাড়ছে অবিশ্বাস্য গতিতে।...
By Ekattor Television 2022-11-03 00:59:01 0 4K
Literature
Miami Dolphins legend Mercury Morris passes absent
The Miami Dolphins missing a legend upon Saturday night time. In accordance towards a write-up...
By Wright Eric 2024-12-02 06:20:18 0 3K
Other
মেট্রো রেল কোন স্টেশনে নামলে, কোথায় যেতে পারবেন.
টাইমলাইনে রেখে দিন..পরবর্তী যে কোন  সময়ে কাজে লাগবে...!!    কোন স্টেশনে নামলে,...
By Suveccha News 2024-10-10 13:31:01 0 2K
Fitness
মন সাফ করার ৫ দাওয়াই
প্রতিদিন হাজার রকমের চিন্তা করি আমরা। সারা দিন নানা কিছু নিয়ে আমাদের মন, মস্তিষ্ক ভাগাড়ে পরিণত...
By Sabrina Khan 2022-09-24 02:24:33 0 3K
Shopping
When you think of fashion Hermes the essentials for a day
Not all of her looks reminisce on the weather. has also served straight up fashion flexes just...
By Lilliana Haynes 2024-10-22 07:16:39 0 4K
Sponsored