ডেঙ্গুতে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়!

0
6K

ডেঙ্গু এখন ভযাবহ রূপ ধারণ করছে। ডেঙ্গু ভাইরাস কারো দেহে ঢোকার পর প্রায় সব সিস্টেমকে আক্রমণ করে। তাই কারো ডেঙ্গু শনাক্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এর নির্ধারিত কোনো চিকিৎসা নেই। কিন্তু সাপোর্টিভ চিকিৎসা ও সঠিক পরিচর্যা করলে জ্বর ভালো হয়ে যায় এবং ঝুঁকিমুক্ত থাকা যায়। ডেঙ্গু ধরা পড়লে ভয় বা টেনশনের কিছু নেই, তবে কোনো ধরনের চিকিৎসা না করালে অনেক সময় ডেঙ্গু প্রাণঘাতী হতে পারে। এর চিকিৎসার ক্ষেত্রে ন্যাশনাল প্রটোকল বা গাইডলাইন রয়েছে।

যাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ভালো, যাদের অন্য কোনো জটিল রোগ নেই, তারা সাধারণত বিশ্রাম নিলে, ঠিকমতো পানি পান করলে, প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধ ছাড়া আর কোনো ওষুধ সেবন না করলে তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যেই ভালো হয়ে যান। এই সময় কোনো ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক, স্টেরয়েড বা ব্যথানাশক ওষুধও ব্যবহার করা যাবে না। ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিকে জীবাণুবাহী এডিস মশা কামড় দিয়ে অন্য একজন সুস্থ মানুষকে কামড়ালে তারও ডেঙ্গু হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ জন্য ডেঙ্গুতে কেউ আক্রান্ত হলে ৯-১০ দিন পর্যন্ত মশারি টানিয়ে তাকে আলাদা করে রাখুন।

ডেঙ্গুর সময় তরল, নরম ও সহজপাচ্য খাবার খান। কারো শুধু জ্বর আছে, পাতলা পায়খানা নেই, বমি নেই, মুখে খেতে পারছে–এ রকম হলে হাসপাতালে ভর্তি না হলেও চলবে। বাসায় রেখেই তখন তাকে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব। জ্বরের সঙ্গে পাতলা পায়খানা, পেট ব্যথা, বমি হলে, অর্থাৎ বিভিন্ন ওয়ার্নিং সাইন দেখা দিলে হাসপাতালে ভর্তি করাই শ্রেয়।
শিশু, গর্ভবতী, বয়স্ক ব্যক্তি, কিডনি, হৃদ্‌রোগীদের ডেঙ্গু শনাক্ত হলে তাদের হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া উচিত। কারো কো-ইনফেকশন অর্থাৎ ডেঙ্গু ও টাইফয়েড একই সঙ্গে হয়েছে–এমনটি হলে টাইফয়েডের চিকিৎসা করা যাবে। প্রচুর তরল যেন দেহে ঢোকে, সে বিষয়টির দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। এ জন্য বেশি করে পানি, ডাবের পানি, শরবত, গ্লুকোজ, স্যালাইন, স্যুপজাতীয় তরল ইত্যাদি খাওয়াতে হবে। রোগীকে পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে।
মানুষের দেহে প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকার স্বাভাবিক মাত্রা হলো দেড় লাখ থেকে চার লাখ। রক্তক্ষরণ বন্ধে এর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। ডেঙ্গুতে বেশির ভাগ রোগীর প্লাটিলেট কমে যায়, তবে সবার নয়। আবার প্লাটিলেট কমে গেলেই প্লাটিলেট দিতে হবে এমন ধারণাও সঠিক নয়।
ডেঙ্গু বা অন্য কোনো ভাইরাস ইনফেকশনে প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে গেলেও শরীর থেকে আপনা-আপনি প্লাটিলেট তৈরি হয়। প্রথম কয়েক দিন কম প্লাটিলেট নিয়েও রোগী যদি টিকে থাকেন, পরবর্তী সময়ে দেহ থেকেই আপনা-আপনি প্লাটিলেট তৈরি হয় এবং ঘাটতি পূরণ হয়ে রোগী সুস্থ হয়ে যান। যদি কারো প্লাটিলেট ৫০ হাজারের মধ্যে থাকে, তাহলে টেনশনের কোনো কারণ নেই। তবে ৫০ হাজারের নিচে প্লাটিলেট নেমে গেলে তখন হাসপাতালে ভর্তি করা যেতে পারে। প্লাটিলেট ২০ হাজারে নেমে এলেও কিন্তু রক্তক্ষরণ হয় না। ১০ হাজারের নিচে নেমে গেলে প্রয়োজনে প্লাটিলেট দেয়া যায়।
যদি দেখা যায়, কেউ রক্তশূন্যতায় আক্রান্ত হয়েছেন, দ্রুত প্লাটিলেটের মাত্রা কমে যাচ্ছে, চামড়ায় রক্তবিন্দুর পরিমাণ বেশি দেখা যাচ্ছে, মাসিকের সময় বেশি রক্ত যাচ্ছে, দাঁতের গোড়া বা মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ছে, খাদ্যনালি থেকে রক্ত পড়ছে, তখন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ব্লাড ট্রান্সফিউশন বা রক্তদানের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী, জ্বরের সঙ্গে প্লাটিলেট কাউন্ট এক লাখের কম এবং রক্তে হেমাটোক্রিট (রক্তের পরিমাণের সঙ্গে লোহিত কণিকার পরিমাণের অনুপাত) ২০ শতাংশ কমবেশি হলে সেটা ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার। এর সঙ্গে রক্তবমি, রক্তনালি লিকের (প্লাজমা লিকেজ) উপসর্গ যেমন: প্রোটিন কমা, পেটে বা ফুসফুসে পানি জমার মতো উপসর্গ থাকতে পারে। ডেঙ্গু থেকে মারাত্মক সমস্যা হলো প্লাজমা লিকেজ, ডিআইসি, মায়োকার্ডিটিস, রক্তপাত, তরল জমে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, কোনো অঙ্গের কার্যকারিতা নষ্ট হওয়া ইত্যাদি।
ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি আলাদা সেরোটাইপ রয়েছে। কেউ একবার একটি সেরোটাইপে আক্রান্ত হলে তার আরও তিনবার ডেঙ্গু হতে পারে এবং পরবর্তী পর্যায়ে তীব্র ডেঙ্গু বা ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হতে পারে। তাই বলা হয়, দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু হওয়া বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। শুধু এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু হয়। সাধারণ অ্যানোফিলিস ও কিউলেক্স মশার কামড়ে ডেঙ্গু হয় না। মানুষ থেকে মানুষে বা এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে ডেঙ্গু ছড়ায় না। তবে ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিদের মশা এড়িয়ে চলা উচিত। ডেঙ্গু ভাইরাস মানবদেহে স্থায়ীভাবে থাকে না। শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধক্ষমতার মাধ্যমে একসময় ওই ভাইরাস শরীর থেকে পুরোপুরি বের হয়ে যায়। কিন্তু ভাইরাসের জন্য যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, সেটা চিরকাল সুপ্ত অবস্থায় থেকে যায়। অন্যান্য ভাইরাস জ্বরের মতোই এই জ্বরের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। এই জ্বরের কোনো ভ্যাকসিন বা টিকাও নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটা এমনিতেই সেরে যায়।
সেরে ওঠার পর করণীয়
ডেঙ্গুর পর শারীরিক ও মানসিক অবস্থা ফিরে পেতে একটু (মাসখানেক) সময় লাগে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই সময়কে Convalescent period বলে। তবে ডায়াবেটিস, কিডনি, শ্বাসরোগ বা অন্য কোনো রোগীর স্বাভাবিক হতে আরও বেশি সময় লাগতে পারে।
ডেঙ্গু হলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কিছুটা হ্রাস পায়। এ জন্য ডেঙ্গু থেকে সেরে ওঠার পরও দুর্বল, অবসাদগ্রস্ততা, মাথা ঘোরা, চলাফেরায় কিছু ভারসাম্যহীনতা থাকে; গভীর ও নিবিড়ভাবে কাজে মনোনিবেশ করতে পারেন না। এ জন্য কমপক্ষে কয়েক সপ্তাহ বিশ্রামে থেকে এরপর আস্তে আস্তে নিয়মিত কাজে যোগ দিন।
জ্বর চলে যাওয়ার পরের সময়টাকে ‘ক্রিটিক্যাল ফেইস’ বা ঝুঁকিপূর্ণ সময় ধরা হয়। ডেঙ্গুতে মারাত্মক সমস্যা হওয়ার সময় আসলে এটাই। এ সময় প্লাটিলেট কাউন্ট কমে যেতে পারে, রক্তচাপ কমে যেতে পারে, রক্তক্ষরণসহ আরও নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এ সময়টায়ও সচেতন থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
Like
Love
12
Search
Categories
Read More
Other
"Essential Hoodies: The Perfect Blend of Minimalism and Comfort"
The Essential Hoodie: A Timeless Wardrobe Staple for Every Occasion Hoodies have evolved from...
By Corteiz Clothing 2024-11-14 09:02:10 0 7K
Health
How To Forever Hemp Australia For Best Pain Relief Results?
Forever Hemp Australia are expected to help with facilitating pressure, decline bothering,...
By GoliathXL10 Capsules 2025-01-08 15:52:15 0 2K
Health
Retinol Serum: Benefits and Choosing the Best in Pakistan
Retinol has gained immense popularity in the skincare world, especially for its remarkable...
By Saad Afzal 2024-10-11 11:15:53 0 5K
Other
The Ultimate Guide to Essentials Hoodie and Essentials Clothing
Introduction to Essentials Hoodie The Essentials Hoodie has taken the fashion world by storm,...
By Backlinks Expert 2025-03-15 19:53:25 0 773
Health
Manhood Plus Danmark: Det kan booste dit helbred med naturlige ingredienser!
ManhoodPlus Male Enhancement DK er lavet af standard dekorationer og er rejst til mænd, der...
By Nexagen Male Enhancement 2025-02-15 19:08:06 0 2K