বিকাশের মাধ্যমে দেশে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স আসা এক বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। আর চার বছরের ব্যবধানে তা বেড়ে প্রায় ১৭ গুণের বেশি হয়েছে। বিকাশের মাধ্যমে আসা গত কয়েক বছরের প্রবাসী আয়ের তথ্য পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। ২০১১ সালে যাত্রা শুরু করে মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (এমএফএস) বিকাশ। ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটির যাত্রা শুরু হয়।

সর্বশেষ ২০২১ সালে বিকাশের মাধ্যমে বৈধ পথে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ২ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা দেশে পাঠিয়েছেন। আর এ অর্থ সরাসরি পৌঁছে গেছে দেশে থাকা প্রবাসীদের প্রিয়জনের বিকাশ হিসাবে। ২০২১ সালে বিকাশের মাধ্যমে দেশে যে প্রবাসী আয় এসেছে, তা ২০২০ সালের তুলনায় প্রায় ১১১ শতাংশ বা দ্বিগুণের বেশি। ২০২০ সালে বিকাশের মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছিল ১ হাজার ১৫১ কোটি টাকা। বর্তমানে ৭০টির বেশি দেশ থেকে ৭৫টি আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রবাসীদের কষ্টার্জিত এসব অর্থ দেশে আসছে। বিদেশ থেকে আসা প্রবাসীদের এসব অর্থের লেনদেন নিষ্পত্তির সঙ্গে জড়িত আছে ১২টি বাণিজ্যিক ব্যাংক।

 

প্রবাসী আয় দেশে পাঠানোকে সহজ ও তাৎক্ষণিক করেছে এমএফএস। তাঁদের সুবিধা মাথায় রেখেই এ খাতে প্রবাসী আয় আনাকে আরও সুবিধাজনক করতে উদ্যোগ নিতে হবে।
- আলী আহম্মেদ, প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা, বিকাশ
 

কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবেই বাড়ছে বিকাশের মাধ্যমে প্রবাসী আয় আসা। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের প্রথম আট মাসে (জানুয়ারি-আগস্ট) বিকাশের মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছে ২ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকার বেশি। বছর শেষে প্রবাসী আয় ৪ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছে যাবে বলে ধারণা প্রতিষ্ঠানটির। প্রবাসীরা কাজের সময় নষ্ট না করে যখন প্রয়োজন, তখনই প্রিয়জনের বিকাশ হিসাবে অর্থ পাঠাতে পারেন বলেই অল্প সময়ের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিকাশের মাধ্যমে প্রবাসী আয় পাঠানোর এই সেবা।

এদিকে দেশে থাকা স্বজনেরা তাঁদের বিকাশ হিসাবে আসা প্রবাসী আয় যখন যেভাবে প্রয়োজন, সেভাবে ব্যবহার করতে পারছেন। ব্যাংকে গিয়ে বা এটিএম বুথে গিয়ে টাকা তোলার ঝামেলা এড়িয়ে বিকাশ হিসাব ব্যবহার করে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা যেকোনো স্থান থেকে প্রবাসী আয় গ্রহণের সুবিধা প্রবাসীদের স্বজনদের দিচ্ছে বাড়তি স্বস্তি।

তেমনই একজন চাঁদপুরের সেলিনা বানু। তিনি বলেন, ‘আগে আমার স্বামী ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠাতেন। আর এখন হঠাৎ টাকার দরকার হলে সঙ্গে সঙ্গে বিকাশেই পাঠিয়ে দেন। তাই আগের মতো আর টাকা আসার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয় না। বিদেশে থাকা স্বামীর আয়ের টাকা সবচেয়ে সহজে পেতে বিকাশই এখন অনেক বড় ভরসার জায়গা।

কয়েক বছর আগে বিকাশে প্রবাসী আয় গ্রহণের সেবা চালু করা হয়। প্রবাসী বাংলাদেশি অধ্যুষিত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শীর্ষস্থানীয় মানি ট্রান্সফার সংস্থাগুলোর সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে বিকাশের এই সেবা দ্রুততার সঙ্গে সম্প্রসারিত হয়। ফলে অল্প সময়ের ব্যবধানেই প্রবাসী আয় আসার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০১৮ সালে বিকাশে প্রবাসী আয় এসেছিল মাত্র ১৪১ কোটি টাকা, ২০১৯ সালে এসেছিল ২৭১ কোটি টাকা। আর গত বছর শেষে যা বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৪২৭ কোটি টাকায়। রেমিটলি, ট্যাপ ট্যাপ সেন্ড, ওয়ার্ল্ড রেমিট, ওয়াইজ, রিয়া, মার্চেন্ট্রেড, গালফ এক্সচেঞ্জ, বাহরাইন ফিন্যান্সিং কোম্পানি (বিএফসি), সোনালী এক্সচেঞ্জ, সিবিএল মানি ট্রান্সফার, অগ্রণী এক্সচেঞ্জ, এনবিএল এক্সচেঞ্জের মতো অর্থ স্থানান্তর প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে প্রবাসীদের অর্থ সহজেই বিকাশ হিসাবে পাঠানো যাচ্ছে। প্রবাসী আয় পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রবাসীদের নানা ধরনের সুবিধা দেয় বিকাশ।

এক্সচেঞ্জ হাউস বা ব্যাংক কাউন্টারের পাশাপাশি মোবাইল অ্যাপ ও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে যেকোনো সময় যেকোনো স্থান থেকে অর্থ পাঠাতে পারেন প্রবাসীরা। আর বাংলাদেশে থাকা প্রবাসীর স্বজনেরা সেই টাকা পাচ্ছেন বিকাশ হিসাবে। দেশের ১২টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এই অর্থ লেনদেন বৈদেশিক মুদ্রায় নিষ্পত্তি হচ্ছে। এই টাকা বিদেশ থেকে দেশে স্থানান্তর হচ্ছে মুহূর্তেই। এ জন্য প্রবাসী বা তাঁর স্বজনের ব্যাংক হিসাব থাকার প্রয়োজন হয় না।

এ বিষয়ে বিকাশের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (সিসিও) আলী আহম্মেদ বলেন, প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ শুধু তাঁদের পরিবার নয়, দেশের অর্থনীতিকেও সমৃদ্ধ করছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির বর্তমান কঠিন সময়ে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভকে সমৃদ্ধ করতেও প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। প্রবাসী আয় দেশে পাঠানোকে সহজ ও তাৎক্ষণিক করেছে এমএফএস। তাঁদের সুবিধা মাথায় রেখেই এ খাতে প্রবাসী আয় আনাকে আরও সুবিধাজনক করতে উদ্যোগ নিতে হবে।

প্রবাসী আয় আনার সুবিধাই কেবল নয়, দেশে বৈধ পথে প্রবাসী আয় আসা উৎসাহিত করতে সরকার আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। সরকারের ওই প্রণোদনার সঙ্গে বিভিন্ন সময় আরও ১ শতাংশ বাড়তি প্রণোদনা দিয়েছে বিকাশ। ফলে বিকাশের মাধ্যমে দেশে প্রবাসী আয় পাঠিয়ে বাড়তি সুবিধা পেয়েছেন প্রবাসীরা। বিকাশে আসা টাকা গ্রাহক তাঁর প্রয়োজনমতো ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়া এক বিকাশ হিসাব থেকে অন্য বিকাশ হিসাবে টাকা পাঠানো, পরিষেবা বিল প্রদান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেতন, কেনাকাটা, মোবাইল রিচার্জ, বিভিন্ন ধরনের পরিবহনের টিকিট কাটা, ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাসিক সঞ্চয়সহ বিভিন্ন সেবায় এসব অর্থ খরচ করতে পারেন গ্রাহকেরা। প্রয়োজনে এজেন্ট বা এটিএম থেকে নগদে টাকা তুলেও খরচ করতে পারেন।

দেশজুড়ে বিকাশের তিন লাখ এজেন্ট রয়েছে। ফলে প্রবাসীর স্বজনেরা তাঁদের ঘরের কাছের বিকাশ এজেন্ট থেকে টাকা তুলতে পারেন। পাশাপাশি ১৩টি শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের দেড় হাজারের বেশি এটিএম বুথ থেকেও বিকাশের টাকা তোলা যাচ্ছে।