সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রলিং: নেশা না অভ্যাস?

0
6KB

সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের বিচরণ এতো বেশি বেড়েছে যেএকে প্রায় নেশাগ্রস্ত অবস্থা বলা যায়। প্রয়োজনে তে আছেইঅপ্রয়োজনে অনেকে সারাদিন শুধু স্ক্রলিং করে যাচ্ছেন। বৃথা কাজে সময় নষ্ট হওয়া ছাড়া যেখান থেকে ফলদায়ক কিছুই আসছে না। উল্টো নেশার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ক্ষতিকর অনেক কিছুই ঘটছে। কিন্তু এই যে সারাটা সময় স্ক্রলিং করা হচ্ছেএটা কেনোএর পেছনে মনোস্তত্ত্ব কিবা মস্তিষ্কের কোন দিকটি কিভাবে কাজ করছে?

মজার একটি তত্ত্ব আছে। ভিডিওটি খেয়াল করুনস্কিনার বক্সএই বাকশটি ব্যবহার করা হয় মনস্তাত্ত্বিক আচরণ পর্যবেক্ষণে। বাকশের ভেতরে একটি ইঁদুর একটি বাটনে চাপ দিচ্ছেকোনো কোনো সময় এই চাপে পাশের নল দিয়ে খাবার আসছে ভেতরে।

তখন সে খাবারের লোভে বারবার সেই বাটনে চাপ দিতে থাকে। তবে প্রত্যেকবার খাবার আসে না। কিন্তু ইদুরের মাথায় একটা জিনিসই ঘুরতে থাকে যে এই বাটন চাপ দিলে খাবার আসে। তাই খাবার না আসা পর্যন্ত সে বাটন চাপতেই থাকে চাপতেই থাকে চাপতেই থাকে।

যদিও মানুষের সাথে ইদুরের পার্থক্য অনেকতবুও বাটন চাপা আর স্ক্রলিং করার নীতি বা সূত্র কিন্তু একই। ইঁদুর যেমন খাবারের আশায় বাটন চাপতেই থাকেতেমনি মানুষও নির্দিষ্ট কিছু পোস্ট বা চাহিদার জিনিস পেতে স্ক্রল করতেই থাকে। যে পোস্ট পেলে মানুষ ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানায়। এভাবে দীর্ঘ সময় হয়ে গেলে কিছু সময়ের জন্য স্ক্রলিং থামিয়ে দেয়কিন্তু একটু পর আবার ফিরে আসেস্ক্রল করতে শুরু করে।

একটি গবেষণায় দেখা গেছেগড়ে মার্কিনিরা দিনে তাদের ফোন টাচ করেদুই হাজার ছয়শ’ বার। এবার কি মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে ইঁদুরের আচরণের সাথে?

সোশ্যাল মিডিয়া ফিড এমন করে ডিজাইন করা হয়েছে যে আপনি স্ক্রল করে শেষ করতে পারবেন না। একের পর এক পোস্ট সামনে আসতেই থাকবে। এই স্ক্রলিং অনেক সময় অটোম্যাটিক বা মনের অজান্তে চলতেই থাকে। শুরুতে এখন থেকে কোনো প্রাপ্তির চাহিদাও থাকে না। জাস্ট চলতে থাকে। ফলে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় কেটে যায়।

যেমন ধরুন সকালে ঘুম থেকে উঠেই আপনি ফোন হাতে নিলেন এবং স্ক্রলিং শুরু করলেনকরেই যাচ্ছেন। হয়তো কাজে যেতে দেরিই হয়ে গেলো। অনেক সময় এই স্ক্রলিং এর কারণে বাকি সব কিছু্কেই অবহেলা করা হয়এমনকি যখন ফোন থেকে দূরে থাকছেন তখন সেই ফোনের চিন্তাতেই অস্থির উদ্বিগ্ন হয়ে থাকছেন।

আপনি কোনো পোস্টে প্রতিক্রিয়া দেখানোআপনি আসলে তাদেরকে তথ্য দিলেন যে এই বিষয়ে আপনার ইন্টারেস্ট আছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে তারা তখন আপনাকে এই জাতীয় পোস্ট এবং বিজ্ঞাপনগুলোই দেখাতে থাকে।

আর এই ডিজাইনটিই আমাদের স্ক্রলিংয়ের আচরণকে প্রভাবিত করে। এবং আপনি আরও বেশি সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যয় করতে থাকেন। বলা যায় ব্যবহারকারীরা আরও সময় ব্যয় করুক তাদের অ্যাপ বা ওয়েবসাইটেএটাই তাদের প্রধান লক্ষ্য।

মজার ব্যাপার হলো এই প্রক্রিয়ায় আরকটি ঘটনা ঘটে। সেটা হলো আমাদের ডোপামিন হরমোনের নিঃসরণ। ওই যে সেই হরমনটাযেটা আমাদের আনন্দহাসিখুশির কারণ। কোনো কিছুতে আমরা আনন্দ পেলে এই হরমন নিসৃত হয়।

শুধু তাই নয়আনন্দদায়কবা মনভালো হবার মত কোনো কিছু পাওয়ার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা থাকলেও এই হরমন নিসৃত হতে থাকে। তাই ঘুম থেকে উঠেই আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢু মারেনদেখি তো কি কি জমা হলো! অনেক অনেক কমেন্ট লাইক লাভ শেয়ার দেখে মনে লাড্ডু ফুটতে থাকে।

এর সাথে আবার আমাদের মাংসপেশির নড়াচড়ার সংশ্লিষ্টতা আছে। যখন আমরা ফোনে শুধু বৃদ্ধা আঙ্গুল নাড়িয়ে ডানে বায়ে নাড়চাড়া করে ডোপামিনের খোরাক পেয়ে যাচ্ছিতখন মস্তিষ্ক এই বার্তাই পায় যে নির্দিষ্টধরনে আঙুলের নড়াচড়ায় ডোপামিন নিসৃত হয়।

তখন সেটা বার বার এই কাজ করতে আমাদেরকে প্ররোচিত করে। আরও স্ক্রলিং আরও কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলে। একটি গবেষণায় দেখা গেছেগড়ে মার্কিনিরা দিনে তাদের ফোন টাচ করেদুই হাজার ছয়শ বার। আর ঠিক এভাবেই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আমাদের মস্তিষ্ককে ছিনতাই করছেএই রিওয়ার্ড পাওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে।

অবশ্য এই ভালো লাগাগুলো সবই সাময়িক। কারণ এমন করে টানা ফোন চালিয়ে যাবার নেতিবাচক দিকগুলোই সবচেয়ে বেশি। যা আপনাকে দীর্ঘ মেয়াদি বিষন্নতার দিকে নিয়ে যায়। ভালো খবরটা হলো আমরা ইঁদুর নই। হতে পারে আমরা তাদের মত বাটন চেপেই যাইতবে আমরা সেই বুদ্ধিবৃত্তির অধিকারী যা তাদের নেই। তবে এই অসীম ফিডের ভান্ডারে স্ক্রলিং থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ নয়কিন্তু শুরু হয় আপনার সচেতনতায়।

লাগাতার স্ক্রলিং করে যাওয়া- আপনার মস্তিষ্কের নিউরনগুলোকেযখন আপনি স্ক্রলিং বন্ধ করতে চান তখন আপনার শরীর ও মস্তিষ্কে কি ঘটে । ফোন রাখার এক ঘণ্টা পর আপনি ফোনটা হাতে নেয়ার চেষ্টা করবেন তিন চারবার। কারণ দিনে মানুষ গড়ে তার ফোন ৫২ বার হাতে নেয়। ১২ ঘণ্টা ফোন হাতে না নিলে আপনি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। ফোন চেক না করায় আপনার স্ট্রেস হরমন নিসৃত হয়। এভাবেই ফোন মানুষের নিউরনে তিন ধরনের পরিবর্তন আনে। একটি জরিপে দেখা গেছেফোন ছাড়া ২৪ ঘণ্টা থাকার পরহারিয়ে যাওয়ার ভয় কাজ করে মনেএকে বলে FOMO (Fear of Missing Out). এর ফলে হার্টবিট বেড়ে যায়রক্তচাপ বেড়ে যায়বাড়ে উদ্বিগ্নতা।

ফোন ছাড়া থাকার ৩য় দিনে আপনি শুনবেন ফোনের রিংটোনভাইব্রেশন। যেন কেউ কল করেছেবা কেউ মেসেজ দিয়েছে সেই শব্দ বা নোটিফিকেশনের শব্দ। এবং আপনি মনে মনে ভাবতে থাকেন এবার ফোন খুললেই অনেক কিছু পেয়ে যাবেন বন্ধু আত্মীয়দের কাছ থেকে। তবে এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলোফোন বন্ধ রাখার এই তৃতীয় দিনে আপনি দেখতে পাবেন আপনার পাশের মানুষটির সাথে সম্পর্ক অনেক ভালো হয়েছে।

ফোন রাখার পঞ্চম দিনে দেখবেনআপনার মনযোগের পরিধি বেড়েছে। কর্মক্ষেত্রে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভালো করছেন। কারণ একই সাথে দুই দিকে মনযোগ দেবার চেষ্টা করলে মস্তিষ্কের জন্য সেটা বেশি পরিশ্রমের কাজ হয়ে যায়।

ফোন বাদ দেয়ার ৫ থেকে ৭ দিন পরআপনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবেন। যেখানে নিজের শরীরের দিকে নজর দেবার সুযোগ হবেপাশের মানুষটির সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের সাথের সাথে সামাজিক সম্পর্কগুলোর দিকেও দৃষ্টি যাবে।

ফলেটানা দুই সপ্তাহ এভাবে স্ক্রলিং বন্ধ রাখলেফোনের জন্য মোহমায়া পিছুটান কেটে যাবে। ওটা শুধু এখন আপনার প্রয়োজনই মেটাবেবাড়তি সময় নষ্ট করবার হাতিয়ার হবে নাগিলে খাবে না আপনাকে। ফলে আপনার মস্তিষ্কই নয় শরীরও দারুণ ইতিবাচকভাবে সাড়া দেবে।

Like
11
Pesquisar
Categorias
Leia mais
Health
Flexopril: The Natural Way to Feel Younger, Healthier and More Energetic
The advantages of Flexopril make it an alluring choice for those looking for regular help with...
Por Glyco Balance 2025-02-04 19:06:34 0 2KB
Outro
CLAT SYLLABUS FOR THE PREPARATION
CLAT Exam syllabus The exam syllabus gives the candidate information about the various aspects...
Por Sophia Ivy 2024-10-07 08:40:25 0 4KB
Fitness
Eroxent και τιμή: Eroxent χρήση Eroxent αποτελέσματα 2025
Eroxent Κριτικές: Η Φυσική...
Por Eroxon Kpitikec 2025-01-10 09:00:45 0 2KB
Shopping
young arrogant and lightly canceled Saint Laurent comedy writer
another strong option for students seeking a school outside of a traditional fashion hub. their...
Por Kenna Mcdowell 2025-01-08 07:59:15 0 4KB
Outro
Essentials Hoodie: The Ultimate Blend of Style and Comfort
Introduction The Essentials Hoodie has taken the fashion world by storm, becoming a must-have for...
Por CommeDes Garcons 2025-02-20 13:15:45 0 1KB