দেখতে হুবহু প্লাস্টিকের ব্যাগ মনে হলেও এটা প্লাস্টিক নয়।
পাট থেকে তৈরি করা সোনালী ব্যাগ। ব্যবহারের পর মাটিতে ফেললে কিছুদিনের মধ্যেই মাটির সঙ্গে মিশে জৈব সার হিসেবে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করবে। রাস্তাঘাটে ফেললে সেটা ড্রেনে পৌঁছুলেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে না। কারণ কিছুদিন পরই জলের সাথে মিশে মাছের খাদ্যে পরিণত হবে।
 
এ এক জাদুকরী উদ্ভাবন, যার উদ্ভাবক জনাব মোবারক আহমদ খান-- মানিকগঞ্জের কৃতি সন্তান, এ বছর স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী।
 
sir
 
স্যারের সঙ্গে আজ দীর্ঘ আলাপচারিতা হলো। মাটি রক্ষা না হলে গাছ বুনে প্রকৃতি বাঁচানো যাবে না, বাঁচানো যাবে না নদীনালাও। বাজারে গিয়ে পাঁচ পদের জিনিস কিনলে পাঁচটা পলিব্যাগ ধরিয়ে দেবে। সেগুলোর মেয়াদ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত। পরবর্তী গন্তব্য বাংলার নদীনালা, খালবিল, পুকুর কিংবা জমিন। বিষয়গুলো সচেতন মানুষমাত্রই অনুভব করেন। কিন্তু, প্রশ্ন হচ্ছে, এর সমাধান কী? সোনালী ব্যাগ কোথায় পাওয়া যাবে? সাধারণ পলিব্যাগের সাথে দামের পার্থক্য কতটা?
 
আপনি চাইলে সোনালী ব্যাগ আপনার বাড়ির পাশের দোকানেই পাওয়া সম্ভব। কেবল আগ্রহটুকু দেখাতে হবে, প্লাস্টিকের পলিব্যাগ বর্জন করতে হবে। আপনার পক্ষ থেকে এটুকুই যথেষ্ট। ক্রেতার আগ্রহ থাকলে বিক্রেতা সে জিনিস দোকানে রাখবেই। সোনালী ব্যাগের দাম খুব বেশি নয়। ব্যবহার এবং আকারের ভিন্নতা অনুসারে বিভিন্ন রকম সোনালী ব্যাগ তৈরি করা হয়। ছবির ব্যাগটির দাম ৮/১০ টাকা, খানিকটা পুরু। এটা শুকনো বাজারের জন্য ব্যবহার করা যাবে, এবং কয়েকবার ব্যবহার করা যাবে। ওদিকে, পাতলা ব্যাগের দাম পড়বে ৫/৬ টাকা । মোবারক স্যার আজ বলছিলেন, সোনালী ব্যাগের দাম আরও কমিয়ে প্রায় শূণ্যের কোঠায় নামানো সম্ভব! কারণ, এক কেজি পাট থেকে এক কেজি সোনালী ব্যাগ তৈরি করা যায়। এক কেজি পাটের দাম ৬০/৭০ টাকার বেশি নয়।
 
পুরো ব্যাপারটা নির্ভর করছে ভোক্তা পর্যায়ে ব্যবহারের ওপর। আমরা যদি বেশি করে ব্যবহার করি, তাহলে সোনালী ব্যাগ বিনামূল্যেও পাওয়া যাবে। কিভাবে? বাজার করার সময় আপনি বিনামূল্যে যে প্লাস্টিকের পলিব্যাগগুলো পাচ্ছেন, দোকানদারকে সেগুলো ৩২০-৩৫০ টাকা কেজি দরে কিনতে হয়। অতএব, বুঝতেই পারছেন, ৬০/৭০ টাকা কেজি দরে কেনা সোনালী ব্যাগের দাম রাখার প্রশ্নই ওঠেনা। সেদিক থেকে দোকানদারের বরং লাভই হবে। এটা কেবল তখনই সম্ভব হবে যখন আমরা প্লাস্টিক ব্যাগের জায়গাটি সোনালী ব্যাগকে দেবো।
 
আলাপচারিতা শেষে আজ হরিরামপুর শ্যামল নিসর্গ'র পক্ষ থেকে মোবারক আহমদ স্যারকে ফুলেল ভালোবাসার পাশাপাশি উপহার দেয়া হলো 'নিসর্গপত্র'-- সংগঠনের পরিবেশ বিষয়ক পত্রিকা।
 
 
স্যারের বাড়ি থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একটা কথা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো। ছেলেবেলা থেকে রচনা লেখায় 'Government should take some necessary steps' লাইনটা লিখেই তো সব দায় সারলাম! এবার নিজে কিছু করি। 'দেশ বদলাবো', 'সমাজ বদলাবো' এগুলো অনেক বড় কথা, দিনশেষে ফলাফলশূণ্য। তারচে ছোট্ট একটা কাজ করি, নিজেকে বদলাই। প্লাস্টিকের পলিব্যাগ বর্জন করি। নিজে সোনালী ব্যাগ ব্যবহার করি, অন্যকে উৎসাহিত করি। দোকানদারকে বারবার জিজ্ঞেস করি, 'ভাই, সোনালী ব্যাগ এনেছেন?'