যিলহজ্জ মাস পুরোটাই ফযীলতপূর্ণ হলেও প্রথম দশ দিনের বিশেষ ফযীলত রয়েছে। তন্মধ্যে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ ফযীলত আলোকপাত করা হলো—
 
১। প্রথম দশ দিনের বিশেষ ফযীলত: 
প্রথম দশ দিনের বিশেষ ফযীলত হিসাবে আল-কুরআনের সূরা আল-ফাজর-এর কয়েকটি আয়াত উল্লেখ করা হলো। যেখানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলা এই দশ দিনের কসম করেছেন বলেই, উলামায়ে কেরাম উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলা সাধারণত তাঁর সৃষ্টির মধ্য থেকে যাকে গুরুত্ব দেন তার কসম করে থাকেন। সূরা আল-ফজরের একদম শুরুতে আল্লাহ তা‘আলা বলছেন,
وَالْفَجْرِ، وَلَيَالٍ عَشْرٍ،
অর্থ : আর ‘শপথ ফজরের এবং দশ রাত্রির। [সূরা আল-ফাজর, আয়াত নং ১-২]
সালাফ এবং পরবর্তী উলামাদের অনেকেই বলেছেন, (ইন্নাহা 'আশরু যিল হিজ্জা) এখানে যে দশ রাত্রি বলা হচ্ছে, এটা হলো; যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন। এখানে (لَيَالٍ) লায়ালিন বলার কারণে ভাবার অবকাশ নেই যে শুধু রাত্রিকে বুঝানো হয়েছে। লায়াল বলে দিন-রাত দুটিকেই বুঝানো যায়। আবার নাহার বলেও দিন রাত্রি উভয়কেই বুঝানো যায়। কোনো সময় লায়াল বলতে শুধু রাতকে বুঝানো হয়। আর নাহার বা ইয়াওম বলতে শুধু দিনকে বা আলোকোজ্জল দিবসকে বোঝানো হয়। ইবনে কাসীর وَلَيَالٍ عَشْرٍ বলতে, যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনকেই বোঝিয়েছে। আর এটিই শুদ্ধতর।
 
২। বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ দিনসমূহ :
জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
أَفْضَلُ أَيَّامِ الدُّنْيَا أَيَّامُ الْعَشْرِ
‘দুনিয়ার দিনসমূহের মধ্যে যিলহজ্জের প্রথম দশদিন সর্বোত্তম দিন।’ (সহীহুল জামে‘, হাদীস নং ১১৩৩)
 
৩। এ দিনগুলোর আমল আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
مَا الْعَمَلُ فِى أَيَّامِ الْعَشْرِ أَفْضَلَ مِنَ الْعَمَلِ فِى هَذِهِ. قَالُوا وَلاَ الْجِهَادُ قَالَ وَلاَ الْجِهَادُ، إِلاَّ رَجُلٌ خَرَجَ يُخَاطِرُ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ فَلَمْ يَرْجِعْ بِشَىْءٍ
‘এমন কোনো দিন নেই যে দিনসমূহের নেক আমল আল্লাহর নিকট যিলহজ্জ মাসের এই দশ দিনের নেক আমল অপেক্ষা বেশি প্রিয়। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আল্লাহর পথে জিহাদ করাও কি নয়? রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জিহাদও নয়। তবে জান-মাল নিয়ে যদি কোনো লোক জিহাদে বের হয় এবং এ দুটির কোনটি নিয়েই আর ফিরে না আসে তার কথা ভিন্ন। (সহীহ আবী দাঊদ, হাদীস নং ২৪৩৮)
অন্যত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বলেছেন,
مَا مِنْ عَمَلٍ أَزْكَى عِنْدَ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ وَلاَ أَعْظَمَ أَجْراً مِنْ خَيْرٍ يَّعْمَلُهُ فِى عَشْرِ الأَضْحَى
‘যেসব আমলের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সর্বোত্তম মর্যাদা লাভ করা যায় যিলহজ্জ মাসের ১ম দশ দিনের আমল তার অন্যতম।’ (সহীহুত তারগীব, হাদীস নং ১১৪৮)
 
৪। এই দশ দিনে সকল মৌলিক ইবাদত একত্রিত করা হয় :
এই দশদিন আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত প্রায় সকল ইবাদত একত্রিত হয়, যা অন্য কোনো সময়ে একত্রিত হওয়া সম্ভব নয়। যেমন হজ্জ, কুরবানী, সালাত, সিয়াম, দান-সাদাকাসহ সকল ইবাদত এই দশ দিন একত্রিত করা যায়। এই দিনগুলোতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলা তাঁর নাম স্মরণ করার ব্যাপারে আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। যেহেতু এই দিনগুলোর শেষের দিকে এসে আমাদের কুরবানী করার অনুমতি দিয়েছেন। আমরা কুরবানী করার মাধ্যমে যে রিযিক প্রাপ্ত হয়েছি তার যেন শুকরিয়া আদায় করি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলা সূরা আল-হজ্জের ২৮ নং আয়াতে বলেছেন,
﴿ لِّيَشۡهَدُواْ مَنَٰفِعَ لَهُمۡ وَيَذۡكُرُواْ ٱسۡمَ ٱللَّهِ فِيٓ أَيَّامٖ مَّعۡلُومَٰتٍ عَلَىٰ مَا رَزَقَهُم مِّنۢ بَهِيمَةِ ٱلۡأَنۡعَٰمِۖ ﴾ [الحج: ٢٨]
“যেন তারা নিজেদের কল্যাণের স্থানসমূহে হাযির হতে পারে এবং তিনি তাদের চতুস্পদ জন্তু থেকে যে রিযিক দিয়েছেন তার ওপর নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে।” [সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত নং ২৮]
 
৫। আরাফার দিনের ফযীলত:
যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন হলো, আরাফার দিন। এ দিনেরও বিশেষ ফযীলত রয়েছে।
আরাফার দিনে সবচেয়ে বেশি মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। আয়েশা রাদিয়াল্লাহ ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَا مِنْ يَوْمٍ أَكْثَرَ مِنْ أَنْ يُعْتِقَ اللهُ فِيهِ عَبْدًا مِنَ النَّارِ مِنْ يَوْمِ عَرَفَةَ وَإِنَّهُ لَيَدْنُو ثُمَّ يُبَاهِى بِهِمُ الْمَلاَئِكَةَ فَيَقُولُ مَا أَرَادَ هَؤُلاَءِ،
‘এমন কোনো দিন নেই, যেদিন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের আরাফার দিনের চেয়ে জাহান্নাম থেকে বেশি মুক্তি দিয়ে থাকেন। তিনি সেদিন বান্দাদের খুব নিকটবর্তী হন, তাদেরকে নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করে বলেন, এরা কী চায়? (অর্থাৎ তারা যা চায় আমি তাই দেব)। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৪৮)