বিশ্বজুড়ে আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা আরও ঝুঁকিতে
বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) যৌথ বৈঠক চলছে ওয়াশিংটনে। সেই বৈঠকে যত প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে, তাতে বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে ভালো খবর নেই। আগামী বছর মন্দার আশঙ্কা করছে তারা। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পূর্বাভাসের পাশাপাশি আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আইএমএফ। তারা সেখানে বলেছে, এপ্রিল মাসের তুলনায় আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা আরও ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
এর আগে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল আইএমএফ। তার সাপেক্ষে অক্টোবর মাসে তারা বলছে, এপ্রিল মাসের পর বিশ্বব্যাপী আর্থিক খাতে আরও কড়াকড়ি আরোপিত হয়েছে। বিশেষ করে উন্নত দেশের সাপেক্ষে এ কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনের ভাষ্য, এসব দেশের আর্থিক খাত এখন ঐতিহাসিক কঠোরতার মুখে পড়েছে। আর কিছু উদীয়মান দেশে এ ধরনের কঠোরতা দেখা গেছে কেবল কোভিড-১৯-এর চরম প্রকোপের সময়। তবে চীনের পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি আকাশ ছুঁয়েছে। তার রাশ টানতে দেশে দেশে নীতি সুদহার বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশের আর্থিক খাতে মৌলিক দুর্বলতা প্রকট। আছে অর্থ পাচারের বাস্তবতা—এ সবকিছু মিলিয়ে উদীয়মান দেশগুলোতে ঋণের সুদহার তরতর করে বাড়ছে। বিশেষ করে দুর্বল অর্থনীতির অবস্থা শোচনীয় আকার ধারণ করেছে। অন্তত ২০টি দেশ সার্বভৌম ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছে বা ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে। বাজার পরিস্থিতির উন্নতি না হলে অনেক দেশই খেলাপি হয়ে পড়বে।
আইএমএফ বলছে, ব্যাংক খাতের বৈশ্বিক স্ট্রেস টেস্টে দেখা গেছে, উদীয়মান দেশের ক্ষেত্রে প্রায় ২৯ শতাংশ ব্যাংক সম্পদ পুঁজির ন্যূনতম সীমা ধরে রাখতে ব্যর্থ হবে। তবে উন্নত দেশের ব্যাংক ভালো অবস্থায় আছে।
এদিকে ২০২২ সালে অর্থনীতিতে যাঁরা নোবেল পুরস্কার পেলেন, তাঁরা আর্থিক খাতের বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য এ পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁরা সবাই অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে ব্যাংকিং খাতের ব্যবস্থাপনার সম্পর্ক নিয়ে কাজ করেছেন।
এবারের নোবেল বিজয়ীদের কাজ আর্থিক খাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ভূমিকা নিয়ে। ব্যাংকিং ব্যবস্থার সম্ভাব্য ধস ঠেকাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে তাঁদের গবেষণা। তাঁরা যে বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করেছেন, তার মধ্যে আছে ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রতি আমানতকারীদের আস্থার সংকট, ঋণ মঞ্জুরের ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়ার গুরুত্ব, ব্যাংকের তারল্য ও মূলধন ঘাটতির বিষয়ে সতর্কতা, সংকটাপন্ন ব্যাংককে বাঁচিয়ে রাখতে আমানতের ওপর যথেষ্ট অঙ্কের বিমার ব্যবস্থা এবং যথাসময়ে সতর্ক না হওয়ার খেসারত হিসেবে পরবর্তী সময় দেউলিয়া ব্যাংককে বাঁচাতে সরকারের বড় অঙ্কের ব্যয়ের বোঝা বহন।
মূল্যস্ফীতি
গত কয়েক দশকের মধ্যে মূল্যস্ফীতি এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো দ্রুত হারে নীতি স্বাভাবিকীকরণের পথে হাঁটছে, অর্থাৎ নীতি সুদহার বৃদ্ধি করছে। এই পরিস্থিতিতে এপ্রিল মাস থেকে সুদহার ও ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের মূল্য ওঠানামা করছে। ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতি দ্রুতই গতি হারাচ্ছে। আইএমএফের পরামর্শ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে এখন দ্রুতই মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। এই পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদি হতে দেওয়া যাবে না।
এদিকে ডলারের বিনিময় মূল্য বাড়ার কারণেও অনেক দেশে মূল্যস্ফীতির হার বাড়ছে। এই বাস্তবতায় উদীয়মান দেশগুলোর প্রতি আইএমএফের পরামর্শ হলো, বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে সুনির্দিষ্টভাবে হস্তক্ষেপ করা, পুঁজি পাচার রোধসহ অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যাতে মুদ্রার বিনিময় হার মসৃণ রাখা যায়।
এখানেই মন্দার শেষ নয়
আইএমএফ সতর্ক করে বলেছে, চূড়ান্ত খারাপের এখনো বাকি আছে। আগামী বছর (২০২৩) অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা করছে সংস্থাটি।
আইএমএফের পূর্বাভাস, ২০২১ সালে বিশ্ব অর্থনীতির ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও ২০২২ সালে ৩ দশমিক ২ শতাংশে নামতে পারে। ২০২৩ সালে তা আরও কমে দাঁড়াতে পারে ২ দশমিক ৭ শতাংশ। এমনকি এই হার ২-এর নিচেও নেমে যেতে পারে, এমন আশঙ্কা ২৫ শতাংশ।
- Art
- Causes
- Crafts
- Dance
- Drinks
- Film
- Fitness
- Food
- Jeux
- Gardening
- Health
- Domicile
- Literature
- Music
- Networking
- Autre
- Party
- Religion
- Shopping
- Sports
- Theater
- Wellness