দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে এত আমদানি কেন

0
4Кб

বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ—এই প্রচার দীর্ঘদিনের। সরকারের প্রায় সব মহল থেকেই বারবার এ কথা বলা হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশকে গত অর্থবছরে ১ কোটি ৫ লাখ ৩৩ হাজার টন খাদ্য আমদানি করতে হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এই আমদানির পরিমাণ কিছুটা কমে ১ কোটি ৪ লাখ ৪৯ হাজার টন হতে পারে। এ তথ্য জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) গত সেপ্টেম্বরের খাদ্যশস্য প্রতিবেদনের।

এবার আমদানি কমতে পারে। এর কারণ, দেশে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বেড়ে যাওয়া নয়; বরং দেশে ডলারসংকট, বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়াসহ নানা কারণে এবার খাদ্যসহ সব ধরনের পণ্যেরই আমদানি কমবে।

খাদ্যপণ্য আমদানি করতে গিয়ে দেশের অর্থনীতির ওপর কী ধরনের চাপ পড়ে, তা বোঝাতে গিয়ে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক গত শনিবার এক অনুষ্ঠানে কিছু তথ্য দেন। তিনি জানান, দেশে প্রতিবছর শুধু ভোজ্যতেল আমদানি করতে ২০ থেকে ২৪ হাজার কোটি টাকা লেগে যায়।

এর বাইরে ডাল, ভুট্টা, গম থেকে শুরু করে গুঁড়া দুধের মতো মৌলিক খাবারের বড় অংশ বাংলাদেশ আমদানি করে। দেশের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্য হয়ে ওঠা গম আমদানি করতে হয় প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টন।

সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয় একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। খাদ্যশস্য পরিস্থিতি শীর্ষক এই প্রতিবেদনে শুধু চাল ও গমের হিসাব দেওয়া হয়।

প্রতিবেদনটিতে দেশে চাল-গমের মজুত, দাম, আমদানি, সরকারি বণ্টনবিষয়ক তথ্য থাকে। সরকারি পর্যায়ে চাল-গম কী পরিমাণে মজুত আছে, সেই তথ্য এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বরাত দিয়ে দেশে চাল-গম আমদানির যে তথ্য এক যুগ ধরে প্রতিবেদনটি থেকে পাওয়া যায়, তাতে অন্তত কোনোভাবেই বলা যায় না, বাংলাদেশ চাল-গমে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কারণ, প্রতিবছরই বাংলাদেশ কমবেশি চাল-গম আমদানি করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য আছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ শুধু চাল আমদানি করেছে ৮৫ কোটি ৯ লাখ ডলার। গম ১৮২ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। আমদানির তালিকায় আছে গুঁড়া দুধ, মসলা, ডালের মতো খাদ্যপণ্য।

বিপুল পরিমাণ খাদ্যপণ্য আমদানির এ তথ্য নিয়ে দেশের নীতিনির্ধারকসহ  ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে খুব একটা আলোচনা নেই। বরং কোন পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ কোন অবস্থানে আছে, স্বাধীনতার পর থেকে দেশে কী পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে, সেই ‘সফলতার’ঢোল বাজাতেই তাঁরা ব্যস্ত।

যদিও গত শনিবার বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক খাদ্যপণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের বিপুল অর্থ খরচ হওয়া নিয়ে দুঃখ করেছেন। অনুষ্ঠানে বলা হয়, সরকার আগামী তিন বছরের মধ্যে ভোজ্যতেলের উৎপাদন ৪০ শতাংশ বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। একই সময়ে চালের উৎপাদন ৩২ লাখ টন বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

কিন্তু খাদ্য নিয়ে একটি বৈশ্বিক সংকট শুরু হওয়ার পর কেন সরকারের এসব পরিকল্পনার কথা মনে হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। গত ১২ বছরে দেশে খাদ্য আমদানি ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। যেসব খাদ্য আমদানি করতে বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা চলে যাচ্ছে, তা যে দেশেই উৎপাদন করা সম্ভব, সে কথা বিশেষজ্ঞরা এত দিন পরেই-বা কেন বলছেন!

যেসব খাদ্যের ভোগ দেশে বাড়ছে, সেগুলোর উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ যদি আজ থেকে ১০ বছর আগেও নেওয়া হতো, তাহলে এখন পরিস্থিতি ভিন্ন হতো।

আবার উল্টো দিক দিয়ে যদি আমরা দেখি, সংরক্ষণের অভাবে দেশে বিপুল পরিমাণ কৃষিপণ্য প্রতিবছর নষ্ট হয়। বেশ কয়েকটি কৃষিপণ্য দেশে চাহিদার চেয়ে বেশি উৎপাদিত হয়। কিন্তু সেগুলো বিদেশের বাজারে বিক্রি করা যায় না।

যেমন আলুর কথা বলা যায়। দেশে বর্তমানে বছরে প্রায় ১ কোটি টন আলু হয়। এর মধ্যে ২০ থেকে ৩০ লাখ টন আলু সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়। বাংলাদেশে যে ধরনের ও জাতের আলু হয়, বৈদেশিক বাজারে এর চাহিদা কম। ফলে তা রপ্তানি করা যায় না।

আবার ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিলে সরকারের টনক নড়ে। এখন বলা হচ্ছে, আগামী তিন থেকে চার বছরের মধ্যে দেশকে পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা হবে।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, মাথাপিছু আয় বেড়ে যাওয়া, রিজার্ভ বেড়ে আকাশছোঁয়া হওয়া, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন—এসব কথার ভিড়ে আসল কাজে মনোযোগ হয়তো কম ছিল। যে কারণে এখন ঘোর সংকটের সময় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো প্রয়োজনীয় খাদ্যের উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা সামনে আনছে। এসব পরিকল্পনার মধ্যে আবার নানা ধরনের অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ও থাকে, যা সরকারের অডিট বিভাগ ও সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রতিবেদনে বারবার এসেছে।

বিশ্ববাজার থেকে খাদ্যপণ্য কেনা কমাতে অনেক আগেই উদ্যোগ নেওয়া দরকার ছিল। দরকার ছিল দেশে এসব খাদ্যপণ্যের উৎপাদন বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া। কেননা, কথার মালায় বাস্তবতাকে ঢেকে দেওয়া যায় না। তাই সরকারের কৃষি, মৎস্য ও খাদ্যবিষয়ক সংস্থাসহ নীতিনির্ধারকদের এ ব্যাপারে হুঁশ আসুক। এতে সবারই মঙ্গল।

 
Like
12
Спонсоры
Поиск
Категории
Больше
Fitness
স্থূলতা শিশুর মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতির কারণ!
বর্তমানে শিশুদের মধ্যে যে সমস্যাটি মারাত্মক হয়ে দাঁড়িয়েছে সেটি হলো স্থূলতা বা মুটিয়ে যাওয়া।...
От Tariqul Islam 2022-09-22 07:22:50 0 3Кб
Другое
A few Up, A few Down: UNC
The UpsBasically The Total Very first 50 %. That very first 50 percent was 1 of the simplest...
От Holmes Whartons 2024-08-19 02:49:15 0 17Кб
Food
Why Custom Sandwich Paper Is a Must-Have for Food Businesses
The food service industry is constantly evolving, and businesses are continually looking for ways...
От Harry Brook 2024-10-15 12:34:05 0 1Кб
Religion
ও মানুষ, কীসে তোমাকে তোমার দয়াময় প্রতিপালকের কাছ থেকে দূরে নিয়ে গেলো? — আল-ইনফিত্বার
যখন আকাশ ছিঁড়ে বিদীর্ণ করা হবে, তারাগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলা হবে, সাগরে বিস্ফোরণ ঘটানো হবে, কবরগুলো...
Другое
Why This SMM Panel Is Rated the Best by Social Media Marketers
Social media marketing has become an integral part of building a successful online presence. With...
От Best SMMXZ 2024-10-26 05:10:18 0 2Кб