৩০ বছর আগেও আমাদের বাবা চাচারা খুব অল্প বেতনে চাকরি করে অথবা ছোট খাট মুদি দোকান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ওনারা জমানো টাকা দিয়ে শহরে জমি কিনে আস্ত বাড়ি বানাতে পারতেন। ঢাকা চট্টগ্রাম সহ সব দেশের সব জেলার ইতিহাস সেইম। এখন চাকরি ব্যবসা করে জমি কিনে বাড়ি করা তো দূরের কথা ফ্ল্যাট কেনাও অসম্ভব।
চাকরিও তখন নির্ঝঞ্ঝাট ছিল। সরকারি বেসরকারি চাকরির ডিউটি ছিল ৯-৫ টা। মার্কেট দোকান সন্ধ্যা পর্যন্ত চলত।

বাবা চাচারা বিকালেই বাসায় ফিরতেন। সন্তানকে পড়াতেন, রাত ১০ টায় ঘুমিয়ে পড়তেন। সকালে মায়েরা নাস্তা বানিয়ে দিত সকালে খাওয়ার জন্য। আমাদেরকে স্কুলে নেয়ার জন্য টিফিন বানিয়ে দিতেন। বাবা চাচাদেরকে অফিসের জন্য টিফিন ক্যারিতে ভাত তরকারি দিতেন। এরপর মহিলাদের তেমন কোন কাজ থাকত না।

মহিলারা নিজেদের জন্য কাথা সেলাই করতেন। আমার মাকে দেখেছি আমাদের জন্য সোয়েটার বুনাতে। সেটাকে তখন জাম্পার বলা হতো। হাত মোজা পা মোজা মায়েরাই বানাতেন। মহিলাদের হাতে বানানো সেইসব শীতের পোষাক পুরুষরা পরত। প্রায় সব বাসায় মহিলারা বিভিন্ন ধরনের আচার বানাতেন। লাকড়ির চুলা, কেরোসিনের চুলায় রান্না অনেক কঠিন। কিন্তু এর মধ্যে মহিলারা হরেক রকম আইটেম রান্না করতেন। বাসায় মেহামান জোর করে ডেকে আনা হতো।

৩০ বছর আগেও সবচেয়ে সস্তা মাছ ছিল নদীর ইলিশ। সেই ইলিশের স্বাদ আর ঘ্রাণ এ যুগের কেউ পায় নাই, পাবেও না শিউর। এখনকার ইলিশের স্বাদ আর রুই মাছের স্বাদ সেইম। প্রতি বছর ২/৩ টা পালা দেশী মুরগী খাই এখনো। এই মুরগীর যে স্বাদ সেই স্বাদ ভোলা যায় না। অথচ আগে মানুষ এই অসাধারণ স্বাদের মুরগীই খেত। এখন তো ফার্ম ছাড়া মুরগীই হয় না। মাছ চাষ করা যায় সেটা শুনলে মানুষ অবাক হতো। পুকুরের ন্যাচারাল মাছ খেয়েই কুলাতো না।

আমরা বছরে একবার গ্রামে গেলে মামারা জাল নিয়ে বের হতো মাছ ধরার জন্য। জাল ফেললে কিছু না কিছু মাছ পেতেনই। নিজের পুকুর নেই? কোনো সমস্যা নেই। প্রতি এলাকায় বড় বড় খাল ছিল। সেই খালে বড়শী বা জাল ফেললেই মাছ পাওয়া যেত। 'আনতা' নামের এক ধরনের গুড়া মাছ ধরার ফাঁদ পেতে রাখা হতো। প্রতিদিন সকালে উঠে সেই মাছ দিয়ে মানুষ ভাত খেত। এখন সেইম মাছের দাম এখনকার হিসেবে ৭০০/৮০০ টাকা কেজি হবে। অর্থাৎ এখন খুব ধনীরা যে মাছ খায় তখন খুব গরিবরা সেই মাছ খেতেন!

দেশী মুরগীর ডিম এখন ২০/২৫ টাকা পিস। হাসের ডিম ২০ টাকা পিস। অথচ সেই আমলের গরিবদের দেখেছি এক সাথে ৩ টা ডিম খেতে। আবার সেই ডিমেও অনেক বরকত ছিল। ১ টা ডিম ভাজলে পরিবারের ৩/৪ জন খেতে পারত। ডিম কিনতে হতো না, সবার বাড়িতেই মুরগী হাস গরু ছাগল থাকত।

এখন যে সবজি ৭০/৮০ টাকা দিয়ে কিনে খাই ৩০ বছর আগে গরিবরা এর চেয়েও ভালো মানের সবজি ফ্রী খেত। গরিব মানে সেই লেভেলের গরিবের কথা বলছি যাদের চাষের জমি নাই।
লাস্ট কবে দেশী গরুর দুধ খেয়েছেন? আমার ধারনা কেউই খান নাই। এখন দুধে স্বাদ নেই। তাই দুধে চিনি মিশিয়ে বিভিন্ন খাবার বানিয়ে খাই। এক সময় দই বানাতে চিনি দিতে হতো না শুনেছি অথচ এখন চিনি ছাড়া দই ই হয় না। কী পরিমান স্বাদ কমে গেছে বুঝতে পারছেন?

এখন মুরগীতে স্বাদ নেই। তাই মুরগীকে পুড়িয়ে চিকেন ফ্রাই, অতিরিক্ত মশলা দিয়ে ঝাল ফ্রাই, সস মিশিয়ে বার্গার, পিজ্জা, হাবিজাবি নামে খাই। আজ পলিশ করা চাল না খেলে ইজ্জত থাকে না। ভাত না প্লাস্টিক খাচ্ছি বুঝি না। হাইব্রিড ডালে স্বাদ নেই, পেয়াজে ঝাঝ নেই, স্বাদের লাউ নিয়ে গান ছিল, সেই লাউ এখন বিভিন্ন রেসিপি করে স্পেশাল ভাবে রান্না করে খেতে হয়। অথচ এই লাউ সেদ্ধ করলেই সেই স্বাদের তরকারি হতো। আগে এক তরকারিতে বিশেষ করে মাছ মাংসের আইটেমে অনেক সময় তেল দেয়াই লাগত না। আর দিতে হলেও কয়েক ফোঁটা তেল যথেষ্ট ছিল। আর এখন প্রায় তরকারিতে ডুবো তেল দেয়া লাগে।

দামের হিসাবে ৩০/৪০ বছর আগে গরিবরা যা খেতেন এখনকার মধ্যবিত্তরা তা চোখেও দেখেন নাই। জাস্ট একটা উদাহরণ দিচ্ছি, ৯৬ সালেই চট্টগ্রাম শহরে ১০ টাকা পিস ইলিশ পাওয়া যেত। সেইম ইলিশ ছিল অনেক বড় সাইজের যেখানে অন্য মাছের দাম ছিল ২০ টাকা পিস। আমরা প্রতিদিন ইলিশ খেতে খেতে ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে গেছিলাম! অথচ সেইম সাইজের ইলিশ আমি নিজেই বেচি এখন ৩ হাজার টাকা পিস, ওজন দেড় কেজির চেয়েও কম! একটা নদীর রুই ভাগে বেচি ৭০০/৮০০ টাকা কেজি।

- ফখরুল ইসলাম
(Collected)
৩০ বছর আগেও আমাদের বাবা চাচারা খুব অল্প বেতনে চাকরি করে অথবা ছোট খাট মুদি দোকান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ওনারা জমানো টাকা দিয়ে শহরে জমি কিনে আস্ত বাড়ি বানাতে পারতেন। ঢাকা চট্টগ্রাম সহ সব দেশের সব জেলার ইতিহাস সেইম। এখন চাকরি ব্যবসা করে জমি কিনে বাড়ি করা তো দূরের কথা ফ্ল্যাট কেনাও অসম্ভব। চাকরিও তখন নির্ঝঞ্ঝাট ছিল। সরকারি বেসরকারি চাকরির ডিউটি ছিল ৯-৫ টা। মার্কেট দোকান সন্ধ্যা পর্যন্ত চলত। বাবা চাচারা বিকালেই বাসায় ফিরতেন। সন্তানকে পড়াতেন, রাত ১০ টায় ঘুমিয়ে পড়তেন। সকালে মায়েরা নাস্তা বানিয়ে দিত সকালে খাওয়ার জন্য। আমাদেরকে স্কুলে নেয়ার জন্য টিফিন বানিয়ে দিতেন। বাবা চাচাদেরকে অফিসের জন্য টিফিন ক্যারিতে ভাত তরকারি দিতেন। এরপর মহিলাদের তেমন কোন কাজ থাকত না। মহিলারা নিজেদের জন্য কাথা সেলাই করতেন। আমার মাকে দেখেছি আমাদের জন্য সোয়েটার বুনাতে। সেটাকে তখন জাম্পার বলা হতো। হাত মোজা পা মোজা মায়েরাই বানাতেন। মহিলাদের হাতে বানানো সেইসব শীতের পোষাক পুরুষরা পরত। প্রায় সব বাসায় মহিলারা বিভিন্ন ধরনের আচার বানাতেন। লাকড়ির চুলা, কেরোসিনের চুলায় রান্না অনেক কঠিন। কিন্তু এর মধ্যে মহিলারা হরেক রকম আইটেম রান্না করতেন। বাসায় মেহামান জোর করে ডেকে আনা হতো। ৩০ বছর আগেও সবচেয়ে সস্তা মাছ ছিল নদীর ইলিশ। সেই ইলিশের স্বাদ আর ঘ্রাণ এ যুগের কেউ পায় নাই, পাবেও না শিউর। এখনকার ইলিশের স্বাদ আর রুই মাছের স্বাদ সেইম। প্রতি বছর ২/৩ টা পালা দেশী মুরগী খাই এখনো। এই মুরগীর যে স্বাদ সেই স্বাদ ভোলা যায় না। অথচ আগে মানুষ এই অসাধারণ স্বাদের মুরগীই খেত। এখন তো ফার্ম ছাড়া মুরগীই হয় না। মাছ চাষ করা যায় সেটা শুনলে মানুষ অবাক হতো। পুকুরের ন্যাচারাল মাছ খেয়েই কুলাতো না। আমরা বছরে একবার গ্রামে গেলে মামারা জাল নিয়ে বের হতো মাছ ধরার জন্য। জাল ফেললে কিছু না কিছু মাছ পেতেনই। নিজের পুকুর নেই? কোনো সমস্যা নেই। প্রতি এলাকায় বড় বড় খাল ছিল। সেই খালে বড়শী বা জাল ফেললেই মাছ পাওয়া যেত। 'আনতা' নামের এক ধরনের গুড়া মাছ ধরার ফাঁদ পেতে রাখা হতো। প্রতিদিন সকালে উঠে সেই মাছ দিয়ে মানুষ ভাত খেত। এখন সেইম মাছের দাম এখনকার হিসেবে ৭০০/৮০০ টাকা কেজি হবে। অর্থাৎ এখন খুব ধনীরা যে মাছ খায় তখন খুব গরিবরা সেই মাছ খেতেন! দেশী মুরগীর ডিম এখন ২০/২৫ টাকা পিস। হাসের ডিম ২০ টাকা পিস। অথচ সেই আমলের গরিবদের দেখেছি এক সাথে ৩ টা ডিম খেতে। আবার সেই ডিমেও অনেক বরকত ছিল। ১ টা ডিম ভাজলে পরিবারের ৩/৪ জন খেতে পারত। ডিম কিনতে হতো না, সবার বাড়িতেই মুরগী হাস গরু ছাগল থাকত। এখন যে সবজি ৭০/৮০ টাকা দিয়ে কিনে খাই ৩০ বছর আগে গরিবরা এর চেয়েও ভালো মানের সবজি ফ্রী খেত। গরিব মানে সেই লেভেলের গরিবের কথা বলছি যাদের চাষের জমি নাই। লাস্ট কবে দেশী গরুর দুধ খেয়েছেন? আমার ধারনা কেউই খান নাই। এখন দুধে স্বাদ নেই। তাই দুধে চিনি মিশিয়ে বিভিন্ন খাবার বানিয়ে খাই। এক সময় দই বানাতে চিনি দিতে হতো না শুনেছি অথচ এখন চিনি ছাড়া দই ই হয় না। কী পরিমান স্বাদ কমে গেছে বুঝতে পারছেন? এখন মুরগীতে স্বাদ নেই। তাই মুরগীকে পুড়িয়ে চিকেন ফ্রাই, অতিরিক্ত মশলা দিয়ে ঝাল ফ্রাই, সস মিশিয়ে বার্গার, পিজ্জা, হাবিজাবি নামে খাই। আজ পলিশ করা চাল না খেলে ইজ্জত থাকে না। ভাত না প্লাস্টিক খাচ্ছি বুঝি না। হাইব্রিড ডালে স্বাদ নেই, পেয়াজে ঝাঝ নেই, স্বাদের লাউ নিয়ে গান ছিল, সেই লাউ এখন বিভিন্ন রেসিপি করে স্পেশাল ভাবে রান্না করে খেতে হয়। অথচ এই লাউ সেদ্ধ করলেই সেই স্বাদের তরকারি হতো। আগে এক তরকারিতে বিশেষ করে মাছ মাংসের আইটেমে অনেক সময় তেল দেয়াই লাগত না। আর দিতে হলেও কয়েক ফোঁটা তেল যথেষ্ট ছিল। আর এখন প্রায় তরকারিতে ডুবো তেল দেয়া লাগে। দামের হিসাবে ৩০/৪০ বছর আগে গরিবরা যা খেতেন এখনকার মধ্যবিত্তরা তা চোখেও দেখেন নাই। জাস্ট একটা উদাহরণ দিচ্ছি, ৯৬ সালেই চট্টগ্রাম শহরে ১০ টাকা পিস ইলিশ পাওয়া যেত। সেইম ইলিশ ছিল অনেক বড় সাইজের যেখানে অন্য মাছের দাম ছিল ২০ টাকা পিস। আমরা প্রতিদিন ইলিশ খেতে খেতে ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে গেছিলাম! অথচ সেইম সাইজের ইলিশ আমি নিজেই বেচি এখন ৩ হাজার টাকা পিস, ওজন দেড় কেজির চেয়েও কম! একটা নদীর রুই ভাগে বেচি ৭০০/৮০০ টাকা কেজি। - ফখরুল ইসলাম (Collected)
Like
15
0 Comentários 0 Compartilhamentos 139 Visualizações 0 Anterior