Προωθημένο
আমেরিকার ভূরাজনীতি ও একটি অভ্যুত্থান

আমাদের প্রথমেই মনে রাখতে হবে আমেরিকা কখনো দেশ গঠনে বন্ধুপ্রতীম নয়।তারা সাধারনণত কথিত উঠতি অর্থনীতির দেশকে ফেলে দেয়ার জন্য কাজ করে থাকে।দর্জিগিরি আর ক্রীতদাস বিক্রির টাকার উপর নির্ভর করে যেটুকু এগিয়েছিলো বাংলাদেশ,তা টেকসই কিছু নয়।আর জাতিগঠনের মৌলিক দিকে না এগিয়ে রাস্তা আর ব্রিজের যে উন্নয়ন তা মানবিক মানুষ গঠনে ব্যর্থ হয়ে কোনদিকে গিয়েছে,দেখাই যাচ্ছে।তো, আসা যাক মূল আলোচনায়।যেসব দেশকে আমেরিকা ফেলে দেয়, সেসব শাসকদের অন্যায় থাকে না,তা নয়। দীর্ঘদিন শাসন চালিয়ে তারা শোষক হয়ে ওঠে।শোষণ, অত্যাচার,দুর্নীতি ক্রমবর্ধমান আকারে বেড়ে মানুষকে আক্রান্ত করে ফেলে।কিন্তু এসব মূলত আমেরিকার ক্ষোভের কারণ নয়।যতোক্ষণ পর্যন্ত তারা আমেরিকার স্বার্থ রক্ষা করতে পারে,ততোক্ষণ তারা সকল অন্যায় দেখেও দেখে না।ঠিক যখন তাদের স্বার্থ ক্ষুন্ন হয়,তখন তারা যেভাবেই হোক সেই সরকারকে ফেলে দেয়। ইরাক, লিবিয়া,আফগানিস্তান এমন ঘটনার শিকার। নতুন যুক্ত হলো বাংলাদেশ।

আমেরিকার বহুদিনের পরিকল্পনা বাংলাদেশ- মিয়ানমার-সেভেন সিস্টার ওয়ার জোন তৈরি করা। উদ্দেশ্য চীনের নজরদারী বৃদ্ধি করা।এদিকে চীন সফরে গিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারে ১৬০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুত প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষর করে এসেছেন।বাংলাদেশের কর্ণফুলী ট্যানেলও করে দিয়েছে চীনারাই।চীনাদের পরিকল্পিত ভারত ঘেরাওয়ের কাজ তারা এগিয়ে নিচ্ছিলো।ত্রিমুখী শক্তির মাঝখানে বাংলাদেশ যেন গরীব ঘরের এক সুন্দরী, ধর্ষিত হওয়া ছিলো তার সময়ের ব্যাপার।চীনের পরিকল্পনা আর এগোতে দিলে ভারতের বিপদ। আমেরিকা চায় না চীনের শক্তি বৃদ্ধি পাক।আবার ভারত চীন দুদেশই চায় বাংলাদেশ তার একক প্রেমিকা থাকুক।এমন অবস্থায় নীতি বাস্তবায়ন বাংলাদেশের জন্য কঠিন হয়ে যায়।উদগ্র উন্নতির আকাঙ্ক্ষা মাঝে মাঝে বিপদে ফেলে।বেশি আশা লোভের নৌকায় নিয়ে যায় মানুষকে।

চীনারা পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের উত্তরে তাদের ভূমিতে কাশগড় থেকে পাকিস্তানের দক্ষিণে গ্যদার সমুদ্র বন্দর পর্যন্ত রাস্তা তৈরি করে দিয়েছে।তারপর ৫৮ বিলিয়ন ডলারের রেলপথের প্রজেক্ট নিয়েছে।এদিকে শ্রীলঙ্কার হাম্বারটোটা বন্দর চীনাদের নিয়ন্ত্রণে। চতুর্ভুজাকারে ভারতকে ঘিরে ঘরার জন্য প্রয়োজন ছিলো কক্সবাজারে একটি স্থাপনা।কক্সবাজার থেকে মিয়ানমারের উপর দিয়ে উত্তর মিয়ানমার--অরুণাচল হয়ে দক্ষিণ তিব্বত হয়ে কাশগড় পর্যন্ত রোড ইনফ্রাসট্রাকচার বানিয়ে এসব জায়গায় সামরিক স্থাপনা বসিয়ে ভারতকে ঘিরে ধরা চীনের উদ্দেশ্য। আমেরিকার হস্তক্ষেপ থেকে বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে ভারত এবার বন্ধুত্ব থেকে তার হাত গুটিয়ে নিলো।দুই নৌকায় পা দেয়ার ফলাফল হলো ভয়াবহ।অনেক উন্নতির আকাঙ্ক্ষা ভরাডুবির দিকে ধাবিত করলো।

অভ্যুত্থানের ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থ পাঠ করলেই জানা যায় আমেরিকা কীভাবে পরিকল্পনার দিকে এগোয়। শীর্ষস্থানীয় কোনো পত্রিকার মাধ্যমে কিছু মানুষকে তারা নায়ক বানিয়ে তোলে।তাদের গায়ে আন্তর্জাতিক পদকের ভূষণ লাগানো হয়।এদিকে বাজার অনিয়ন্ত্রণ করার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে সাধারণ জনগণকে বিষিয়ে তোলা হয়। এমন অবস্থায়ও সরকার টিকে থাকতে পারে,যদি দারুণ সৎ সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করে। উদাহরণ হিসেবে ফিদেল কাস্ট্রোর নাম উল্লেখ করা যেতে পারে।তাঁর মিতো সৎ থেকে কঠোর কঠিনভাবে রাষ্ট্র চালাতে বাংলাদেশের সরকার পারেনি। বরং স্বজনপ্রীতি,দুর্নীতি,অর্থপাচার,ক্ষমতার অপব্যবহার মানুষকে ক্ষুব্ধ করেছে।শক্তিশালী বহিঃশত্রু থেকে আপনি তখনই বাঁচতে পারবেন,যখন আপনার ঘর ঠিক থাকবে।

অভ্যুত্থানের পূর্বে জনগণের ক্ষুব্ধতার সাথে সামরিক বাহিনীকেও ক্ষুব্ধ করার নানামুখী কার্যকলাপ গ্রহণ করা হয়। পরিকল্পিত অনিয়ম ঘটিয়ে প্রচুর অর্থের বিনিময়ে তাদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করা হয়।বলতে পারেন, সবকিছু আমেরিকার পরিকল্পনা,তবে শেখ হাসিনার দোষ নাই? দোষ আছে।সেটার একদিক হলো ফিদেল এর মতো হতে না পারা।অশিল্প লোভের দোকান।তবে এমন ঘটনা ২০০৬ সালেই হতে পারতো। আমেরিকার ১৮ বছর দেরি হলো,এই যা!

অভ্যুত্থান বা কোনো দেশের সরকারকে ফেলে দিতে আমেরিকা দীর্ঘ গবেষণা চালায়।সেই চেশের মানুষ, সমাজ ও মানুষের আবেগের চুকচেরা বিশ্লেষণ করে। পতিত বামদের আবেগ আর ধর্মের অন্ধতা এখানে প্রয়োগ করা হয়।বাজার পপরিস্থিতি আর আইনশৃঙ্খলা এমন অবস্থায় আসে যে শাসককে হত্যা করলেও জনগণ ক্ষোভের পরিবর্তে উল্লাস করবে।এ এক সাজানো চিত্রনাট্য ;যার উপর দিয়ে হেঁটে যাবে তার জন্মভূমির মানুষেরা।হেঁটে যাবে আধাবুদ্ধিজীবী।

অভ্যুত্থানের পর কী হয়
হুমায়ূন আহমেদ তাঁর দেয়াল উপন্যাসে লিখেছেন, মেজর জিয়াউর রহমান ক্ষমতা গ্রহণের পর সে বছর প্রচুর ইলিশ মাছ ধরা পড়ে। সাধারনণত ইলিশ মাছের দাম কমলে অন্য মাছের দামও কমে যায়। আরবীয় দেশগুলোর সাহায্য আসতে থাকে।জনগণ খুব খুশি হলো। ভাবলো, দেশের উপর একটা রহমত এসেছে। অপরদিকে ক্যান্টনমেন্ট এর ভেতরে শত শত হত্যার হাহাকারে বাতাস ভারি হয়ে উঠলো।এবারও এমন কিছু হতে পারে। ভর্তুকি দিয়ে দ্রব্যমূল্য কিছুটা কমানো হতে পারে। সাধারণ মানুষ থেকে ফেসবুক বুদ্ধিজীবীরা সরকারের প্রশংসা করবে।মিডিয়াগুলোতে প্রচুর সুনাম করা হবে। আসল বীভৎসতা প্রকাশ পাবে অনেক পরে। চলবে আর্মির অভিযান। অপছন্দের লোকদের বাড়ি থেকে টাকা ও অস্ত্র বের হবে।মানুষ জয়ধ্বনি দেবে। আর্মির প্রশংসা করবে।কেউ ভাববেও না,একদল মানুষ যারা ইতিহাস,দর্শন,সাহিত্য,রাজনীতির কিছুই না জেনে শুধু অস্ত্রের জোরে ১৮ কোটি মানুষের উপরে মাতবরি করছে।

আমেরিকার পরবর্তী কাজ
এই সরকার সহজে ক্ষমতা ছাড়বে না।রাষ্ট্র সংস্কারের নামে তারা দীর্ঘদিন দেশ শাসন করবে।ততোদিনে দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের প্রসার ঘটবে,বা ঘটানো হবে।তখন শান্তির জন্য বাংলাদেশে আসবে জাতিসংঘ বা আমেরিকা।সেন্টমার্টিন তাদের হাতে দেবে তাদের পুতুল সরকার।অথবা এটা অন্যভাবেও ঘটতে পারে।তারা খোলস পরিবর্তন করে আরী সূক্ষ্ম চাল দিতে পারে। আরো আধুনিক কায়দায় তাদের ইচ্ছের প্রতিফলন ঘটাতে পারে।

ভারতের লাভক্ষতি
সাদ্দাম এবং গাদ্দাফি ততোক্ষণ ভালো ছিলো, যতোক্ষণ আমেরিকার স্বার্থরক্ষা হচ্ছিলো।দুজন তখনই শত্রু হলেন যখন তাদের স্বার্থ ক্ষুন্ন হলো।সাদ্দাম ডলার বাদ দইয়ে অন্য মুদ্রার কথা বললেন।গাদ্দাফি তার গচ্ছিত অঢেল স্বর্ণ বিক্রি করে আফ্রিকায় ব্যাংকের কথা বললেন।তাঁরা তখনই মৃত্যুর মুখে পড়লেন।শেখ হাসিনাকে দিয়ে ভারতের স্বার্থরক্ষা হচ্ছিলো।চীনের সাথে সম্পর্ক ভারতকে ক্ষেপিয়ে তুললো।কিন্তু চীনের পরিবর্তে ভারতের নতুন শত্রু হবে আমেরিকা।সেভেন সিস্টারে অশান্তি বৃদ্ধি পাবে।পররাষ্ট্রনীতি চলে দুভাবে-- এক:নতজানু হয়ে সম্পর্ক রক্ষা,দুই: চাপে রেখে সম্পর্ক আদায় করা।প্রতিবেশি বেশি অনড় হলে দ্বিতীয়টি সহজে পারা যায় না।পারতে গিয়ে বিএনপি বিপদে পড়েছিলো।দশট্রাক অস্ত্র ভারতে প্রবেশ করাতে গিয়ে তারা ভারতের স্থায়ী শত্রুতে পরিণত হয়।এই সরকার প্রথমত আমেরিকার স্বার্থ রক্ষা করবে।কারণ তারাই দীর্ঘদিন এদের প্রমোট করেছে।তাতে ভারতের আগে ক্ষতি হবে চীনের।ভারত ক্ষতি টের পাবে কিছুটা পরে।

উপসংহার
একটি ঐতিহাসিক গল্প দিয়ে লেখাটি শেষ করি--
নবাব সিরাজউদ্দৌলা সিংহাসন ছেড়ে পালানোর পর মীর জাফর আলী খান সিংহাসনে আরোহণ করবেন। হাতল ধরে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি।দীর্ঘ অপেক্ষার পর ক্লাইভ আসলেন।তার হাত ধরে মীর সাহেব সিংহাসনে বসতে বসতে বললেন,"আমি অতোটা অকৃতজ্ঞ নই।" ৫ আগস্ট থেকে ৮ আগস্ট ছিলো সেই হাতল ধরে দাঁড়িয়ে থাকার সময়।উপনিবেশবাদের চেহারা পাল্টেছে।অস্ত্রের চেয়ে মাথার ব্যবহার এখানে বেশি হচ্ছে। যুদ্ধ সাজের পরিবর্তে পরে আসছে স্যুট টাই।হাতে অস্ত্রের বদলে ল্যাপটপ।

বি: দ্র:
দুটি ধারালো আক্কেলদাঁত ওঠার পর জিহবাটাকে নিয়ে বিপদে পড়েছি।এখন দাঁত উঠিয়ে ফেলবো,নাকি জিহ্বা কেটে ফেলবো,বুঝতে পারছি না।
আমেরিকার ভূরাজনীতি ও একটি অভ্যুত্থান ⬇️ আমাদের প্রথমেই মনে রাখতে হবে আমেরিকা কখনো দেশ গঠনে বন্ধুপ্রতীম নয়।তারা সাধারনণত কথিত উঠতি অর্থনীতির দেশকে ফেলে দেয়ার জন্য কাজ করে থাকে।দর্জিগিরি আর ক্রীতদাস বিক্রির টাকার উপর নির্ভর করে যেটুকু এগিয়েছিলো বাংলাদেশ,তা টেকসই কিছু নয়।আর জাতিগঠনের মৌলিক দিকে না এগিয়ে রাস্তা আর ব্রিজের যে উন্নয়ন তা মানবিক মানুষ গঠনে ব্যর্থ হয়ে কোনদিকে গিয়েছে,দেখাই যাচ্ছে।তো, আসা যাক মূল আলোচনায়।যেসব দেশকে আমেরিকা ফেলে দেয়, সেসব শাসকদের অন্যায় থাকে না,তা নয়। দীর্ঘদিন শাসন চালিয়ে তারা শোষক হয়ে ওঠে।শোষণ, অত্যাচার,দুর্নীতি ক্রমবর্ধমান আকারে বেড়ে মানুষকে আক্রান্ত করে ফেলে।কিন্তু এসব মূলত আমেরিকার ক্ষোভের কারণ নয়।যতোক্ষণ পর্যন্ত তারা আমেরিকার স্বার্থ রক্ষা করতে পারে,ততোক্ষণ তারা সকল অন্যায় দেখেও দেখে না।ঠিক যখন তাদের স্বার্থ ক্ষুন্ন হয়,তখন তারা যেভাবেই হোক সেই সরকারকে ফেলে দেয়। ইরাক, লিবিয়া,আফগানিস্তান এমন ঘটনার শিকার। নতুন যুক্ত হলো বাংলাদেশ। আমেরিকার বহুদিনের পরিকল্পনা বাংলাদেশ- মিয়ানমার-সেভেন সিস্টার ওয়ার জোন তৈরি করা। উদ্দেশ্য চীনের নজরদারী বৃদ্ধি করা।এদিকে চীন সফরে গিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারে ১৬০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুত প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষর করে এসেছেন।বাংলাদেশের কর্ণফুলী ট্যানেলও করে দিয়েছে চীনারাই।চীনাদের পরিকল্পিত ভারত ঘেরাওয়ের কাজ তারা এগিয়ে নিচ্ছিলো।ত্রিমুখী শক্তির মাঝখানে বাংলাদেশ যেন গরীব ঘরের এক সুন্দরী, ধর্ষিত হওয়া ছিলো তার সময়ের ব্যাপার।চীনের পরিকল্পনা আর এগোতে দিলে ভারতের বিপদ। আমেরিকা চায় না চীনের শক্তি বৃদ্ধি পাক।আবার ভারত চীন দুদেশই চায় বাংলাদেশ তার একক প্রেমিকা থাকুক।এমন অবস্থায় নীতি বাস্তবায়ন বাংলাদেশের জন্য কঠিন হয়ে যায়।উদগ্র উন্নতির আকাঙ্ক্ষা মাঝে মাঝে বিপদে ফেলে।বেশি আশা লোভের নৌকায় নিয়ে যায় মানুষকে। চীনারা পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের উত্তরে তাদের ভূমিতে কাশগড় থেকে পাকিস্তানের দক্ষিণে গ্যদার সমুদ্র বন্দর পর্যন্ত রাস্তা তৈরি করে দিয়েছে।তারপর ৫৮ বিলিয়ন ডলারের রেলপথের প্রজেক্ট নিয়েছে।এদিকে শ্রীলঙ্কার হাম্বারটোটা বন্দর চীনাদের নিয়ন্ত্রণে। চতুর্ভুজাকারে ভারতকে ঘিরে ঘরার জন্য প্রয়োজন ছিলো কক্সবাজারে একটি স্থাপনা।কক্সবাজার থেকে মিয়ানমারের উপর দিয়ে উত্তর মিয়ানমার--অরুণাচল হয়ে দক্ষিণ তিব্বত হয়ে কাশগড় পর্যন্ত রোড ইনফ্রাসট্রাকচার বানিয়ে এসব জায়গায় সামরিক স্থাপনা বসিয়ে ভারতকে ঘিরে ধরা চীনের উদ্দেশ্য। আমেরিকার হস্তক্ষেপ থেকে বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে ভারত এবার বন্ধুত্ব থেকে তার হাত গুটিয়ে নিলো।দুই নৌকায় পা দেয়ার ফলাফল হলো ভয়াবহ।অনেক উন্নতির আকাঙ্ক্ষা ভরাডুবির দিকে ধাবিত করলো। অভ্যুত্থানের ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থ পাঠ করলেই জানা যায় আমেরিকা কীভাবে পরিকল্পনার দিকে এগোয়। শীর্ষস্থানীয় কোনো পত্রিকার মাধ্যমে কিছু মানুষকে তারা নায়ক বানিয়ে তোলে।তাদের গায়ে আন্তর্জাতিক পদকের ভূষণ লাগানো হয়।এদিকে বাজার অনিয়ন্ত্রণ করার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে সাধারণ জনগণকে বিষিয়ে তোলা হয়। এমন অবস্থায়ও সরকার টিকে থাকতে পারে,যদি দারুণ সৎ সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করে। উদাহরণ হিসেবে ফিদেল কাস্ট্রোর নাম উল্লেখ করা যেতে পারে।তাঁর মিতো সৎ থেকে কঠোর কঠিনভাবে রাষ্ট্র চালাতে বাংলাদেশের সরকার পারেনি। বরং স্বজনপ্রীতি,দুর্নীতি,অর্থপাচার,ক্ষমতার অপব্যবহার মানুষকে ক্ষুব্ধ করেছে।শক্তিশালী বহিঃশত্রু থেকে আপনি তখনই বাঁচতে পারবেন,যখন আপনার ঘর ঠিক থাকবে। অভ্যুত্থানের পূর্বে জনগণের ক্ষুব্ধতার সাথে সামরিক বাহিনীকেও ক্ষুব্ধ করার নানামুখী কার্যকলাপ গ্রহণ করা হয়। পরিকল্পিত অনিয়ম ঘটিয়ে প্রচুর অর্থের বিনিময়ে তাদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করা হয়।বলতে পারেন, সবকিছু আমেরিকার পরিকল্পনা,তবে শেখ হাসিনার দোষ নাই? দোষ আছে।সেটার একদিক হলো ফিদেল এর মতো হতে না পারা।অশিল্প লোভের দোকান।তবে এমন ঘটনা ২০০৬ সালেই হতে পারতো। আমেরিকার ১৮ বছর দেরি হলো,এই যা! অভ্যুত্থান বা কোনো দেশের সরকারকে ফেলে দিতে আমেরিকা দীর্ঘ গবেষণা চালায়।সেই চেশের মানুষ, সমাজ ও মানুষের আবেগের চুকচেরা বিশ্লেষণ করে। পতিত বামদের আবেগ আর ধর্মের অন্ধতা এখানে প্রয়োগ করা হয়।বাজার পপরিস্থিতি আর আইনশৃঙ্খলা এমন অবস্থায় আসে যে শাসককে হত্যা করলেও জনগণ ক্ষোভের পরিবর্তে উল্লাস করবে।এ এক সাজানো চিত্রনাট্য ;যার উপর দিয়ে হেঁটে যাবে তার জন্মভূমির মানুষেরা।হেঁটে যাবে আধাবুদ্ধিজীবী। অভ্যুত্থানের পর কী হয়⬇️ হুমায়ূন আহমেদ তাঁর দেয়াল উপন্যাসে লিখেছেন, মেজর জিয়াউর রহমান ক্ষমতা গ্রহণের পর সে বছর প্রচুর ইলিশ মাছ ধরা পড়ে। সাধারনণত ইলিশ মাছের দাম কমলে অন্য মাছের দামও কমে যায়। আরবীয় দেশগুলোর সাহায্য আসতে থাকে।জনগণ খুব খুশি হলো। ভাবলো, দেশের উপর একটা রহমত এসেছে। অপরদিকে ক্যান্টনমেন্ট এর ভেতরে শত শত হত্যার হাহাকারে বাতাস ভারি হয়ে উঠলো।এবারও এমন কিছু হতে পারে। ভর্তুকি দিয়ে দ্রব্যমূল্য কিছুটা কমানো হতে পারে। সাধারণ মানুষ থেকে ফেসবুক বুদ্ধিজীবীরা সরকারের প্রশংসা করবে।মিডিয়াগুলোতে প্রচুর সুনাম করা হবে। আসল বীভৎসতা প্রকাশ পাবে অনেক পরে। চলবে আর্মির অভিযান। অপছন্দের লোকদের বাড়ি থেকে টাকা ও অস্ত্র বের হবে।মানুষ জয়ধ্বনি দেবে। আর্মির প্রশংসা করবে।কেউ ভাববেও না,একদল মানুষ যারা ইতিহাস,দর্শন,সাহিত্য,রাজনীতির কিছুই না জেনে শুধু অস্ত্রের জোরে ১৮ কোটি মানুষের উপরে মাতবরি করছে। আমেরিকার পরবর্তী কাজ⬇️ এই সরকার সহজে ক্ষমতা ছাড়বে না।রাষ্ট্র সংস্কারের নামে তারা দীর্ঘদিন দেশ শাসন করবে।ততোদিনে দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের প্রসার ঘটবে,বা ঘটানো হবে।তখন শান্তির জন্য বাংলাদেশে আসবে জাতিসংঘ বা আমেরিকা।সেন্টমার্টিন তাদের হাতে দেবে তাদের পুতুল সরকার।অথবা এটা অন্যভাবেও ঘটতে পারে।তারা খোলস পরিবর্তন করে আরী সূক্ষ্ম চাল দিতে পারে। আরো আধুনিক কায়দায় তাদের ইচ্ছের প্রতিফলন ঘটাতে পারে। ভারতের লাভক্ষতি ⬇️ সাদ্দাম এবং গাদ্দাফি ততোক্ষণ ভালো ছিলো, যতোক্ষণ আমেরিকার স্বার্থরক্ষা হচ্ছিলো।দুজন তখনই শত্রু হলেন যখন তাদের স্বার্থ ক্ষুন্ন হলো।সাদ্দাম ডলার বাদ দইয়ে অন্য মুদ্রার কথা বললেন।গাদ্দাফি তার গচ্ছিত অঢেল স্বর্ণ বিক্রি করে আফ্রিকায় ব্যাংকের কথা বললেন।তাঁরা তখনই মৃত্যুর মুখে পড়লেন।শেখ হাসিনাকে দিয়ে ভারতের স্বার্থরক্ষা হচ্ছিলো।চীনের সাথে সম্পর্ক ভারতকে ক্ষেপিয়ে তুললো।কিন্তু চীনের পরিবর্তে ভারতের নতুন শত্রু হবে আমেরিকা।সেভেন সিস্টারে অশান্তি বৃদ্ধি পাবে।পররাষ্ট্রনীতি চলে দুভাবে-- এক:নতজানু হয়ে সম্পর্ক রক্ষা,দুই: চাপে রেখে সম্পর্ক আদায় করা।প্রতিবেশি বেশি অনড় হলে দ্বিতীয়টি সহজে পারা যায় না।পারতে গিয়ে বিএনপি বিপদে পড়েছিলো।দশট্রাক অস্ত্র ভারতে প্রবেশ করাতে গিয়ে তারা ভারতের স্থায়ী শত্রুতে পরিণত হয়।এই সরকার প্রথমত আমেরিকার স্বার্থ রক্ষা করবে।কারণ তারাই দীর্ঘদিন এদের প্রমোট করেছে।তাতে ভারতের আগে ক্ষতি হবে চীনের।ভারত ক্ষতি টের পাবে কিছুটা পরে। উপসংহার⬇️ একটি ঐতিহাসিক গল্প দিয়ে লেখাটি শেষ করি-- নবাব সিরাজউদ্দৌলা সিংহাসন ছেড়ে পালানোর পর মীর জাফর আলী খান সিংহাসনে আরোহণ করবেন। হাতল ধরে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি।দীর্ঘ অপেক্ষার পর ক্লাইভ আসলেন।তার হাত ধরে মীর সাহেব সিংহাসনে বসতে বসতে বললেন,"আমি অতোটা অকৃতজ্ঞ নই।" ৫ আগস্ট থেকে ৮ আগস্ট ছিলো সেই হাতল ধরে দাঁড়িয়ে থাকার সময়।উপনিবেশবাদের চেহারা পাল্টেছে।অস্ত্রের চেয়ে মাথার ব্যবহার এখানে বেশি হচ্ছে। যুদ্ধ সাজের পরিবর্তে পরে আসছে স্যুট টাই।হাতে অস্ত্রের বদলে ল্যাপটপ। বি: দ্র:⬇️ দুটি ধারালো আক্কেলদাঁত ওঠার পর জিহবাটাকে নিয়ে বিপদে পড়েছি।এখন দাঁত উঠিয়ে ফেলবো,নাকি জিহ্বা কেটে ফেলবো,বুঝতে পারছি না।
Sad
1
0 Σχόλια 0 Μοιράστηκε 10χλμ. Views 0 Προεπισκόπηση
Προωθημένο