আরাকান প্রশ্নে বাংলাদেশের জাতীয় কৌশলগত অবস্থান কী?

0
7كيلو بايت

মিয়ানমারের দিক থেকে একটা সম্ভাব্য বিপদ ধেয়ে আসছে বলে আশঙ্কা করছেন দেশ-বিদেশের অনেকেই। সীমিত সম্পদের অতি জনবহুল দেশে সাড়ে ১১ লাখ বড় ধরনের শরণার্থীর বড় বোঝা ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের ওপর আছে। আবাসন, খাদ্য, পানীয় ওষুধ সরবরাহ, সামাজিক নিরাপত্তা, ভবিষ্যৎ মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনাসহ পরিবেশ বিপর্যয় সবকিছু আমলে নিয়ে রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন খুব জরুরি। নতুন আপদ সীমান্ত অঞ্চলে তাদের অভ্যন্তরীণ পক্ষগুলোর মধ্যকার যুদ্ধ, গোলাগুলি, ছুটে আসা গোলাবারুদ এবং উপর্যুপরি বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন। স্পষ্টতই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে আরাকান আর্মির তৎপরতা সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা হচ্ছে, পাশাপাশি নতুন শরণার্থীপ্রবাহ তৈরির চেষ্টাও হচ্ছে। জান্তা সমর্থিত বার্মিজ রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কাগুজে ও শরীরী প্রতিবাদ ছাড়া দৃশ্যত কিছুই করতে পারছে না ঢাকা।
 
প্রশ্ন হচ্ছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এবং আরাকান আর্মির তৎপরতা প্রশ্নে বাংলাদেশের জাতীয় কৌশল আছে কি, যা কি না, কূটনৈতিক অংশীদারদের সঙ্গে দর-কষাকষির প্রশ্নে উত্তীর্ণ! জাতীয় কৌশল নেই বলেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রসচিব ব্যক্তিগত কূটনীতি দিয়ে এই সমস্যার কূলকিনারা করতে পারছে না। স্পষ্টতই মনে হচ্ছে, একমুখী রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে এটাকে যত বেশি ‘ডিল’ করার চেষ্টা হচ্ছে, সমস্যাটা ততই গভীর হচ্ছে। বিষয়টা প্রথমেই আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক কূটনীতির অর্থাৎ ভূরাজনৈতিক এবং দ্বিতীয়ত সামরিক। এর একটা বড় অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত ছিল যেটা সময়ের সঙ্গে গৌণ হতে যাচ্ছে বলে আপাতত মনে হচ্ছে।

বাংলাদেশকে বিবেচনায় নিতে হবে আরাকান সংকটের অংশীজন কারা, কার কী লক্ষ্য? এবং লক্ষ্যগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের প্রত্যাশা কোথায় ও কীভাবে ‘বেষ্ট ফিট’ করবে?  

১. মিয়ানমার জান্তা: নাগরিকত্ব অস্বীকার করে জান্তা আসলে রোহিঙ্গাদের দেশ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার চায়। জাতিগত নিধনের মাধ্যমে বর্মিজ রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা থেকে রোহিঙ্গাদের গণবিলুপ্তিই তাদের প্রধানতম চাওয়া। রোহিঙ্গাদের বসতভূমি, চাষের জমি, অর্থনৈতিক অঞ্চল, বন্দর ইত্যাদি উপরি পাওনা।  

২. চীন: মিয়ানমারের রাজনীতিকে গভীরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে তার সেনাবাহিনী। এই অবস্থান মেনেই বর্মিজ জান্তাকে হাতে রাখতে রোহিঙ্গা ইস্যু চীনের কাছে গৌণ, অর্থাৎ চীনের কাছেও রোহিঙ্গারা খরচযোগ্য। রোহিঙ্গা শরণার্থী কিংবা রাখাইনদের জাতিগত নিধন প্রশ্নে চীন চোখ বন্ধ করে রাখে, জাতিসংঘে জান্তাবিরোধী প্রস্তাবে ভেটো দেয়।  

৩. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: এশিয়া-প্যাসিফিক ও অর্থনৈতিক বিশ্বে চীনের ক্রমাগত উত্থানের বিপরীতে চীনকে মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের বহুবিধ সামরিক, বাণিজ্যিক ও মেধাস্বত্ত্বগত কৌশল আছে। দক্ষিণ চীন সাগর, তাইওয়ান, হংকং, কোয়াড কিংবা চীনকে প্রযুক্তিগত মোকাবিলার পাশাপাশি বঙ্গোপসাগর-আরাকানকেন্দ্রিক নতুন একটি মার্কিন ফন্ট খোলার পরিকল্পনা কিংবা চেষ্টা আছে কি না, সেটি সামরিক ও ভূরাজনৈতিক দিক থেকে গভীরভাবে যাচাই করা দরকার।

বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে সবচেয়ে সোচ্চার আন্তর্জাতিক সক্রিয় পক্ষ যুক্তরাষ্ট্র এবং তারা রোহিঙ্গা শিবির ব্যবস্থাপনার প্রধানতম দাতাও। রোহিঙ্গাদের জন্য মার্কিন মোট সাহায্য বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।

 

৪. জাপান: চীনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মিয়ানমারের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও বিনিয়োগে জাপান সক্রিয় রয়েছে। জাপান সেনাশাসনের বদলে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সচল করতে চায়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে তাদের ভূমিকা ম্রিয়মাণ। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে ‘রোহিঙ্গাদের দুর্দশার বিষয়ে জাপান সরকার অনেকটাই উদাসীন।’

৫. আসিয়ান: আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পক্ষদের প্রভাব ও ঝামেলায় মিয়ানমার নিয়ে আসিয়ান অনেকটাই নিরুপায়। আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোও প্রতিবেশী মিয়ানমারের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া পুনরায় সচল করতে চায়। জান্তার সঙ্গে যুদ্ধ শুধু বাংলাদেশ সীমান্তেই হচ্ছে না বরং আরও কয়েকটি দেশের সীমান্তেও হচ্ছে। ফলে অব্যাহত অস্ত্রও মাদক চোরাচালানের পুরোনো সমস্যার পাশাপাশি নতুন করে সৃষ্টি হয়েছে অস্থিতিশীল সীমান্ত, যুদ্ধ ও শরণার্থী সমস্যা। এমতাবস্থায় সঠিক কূটনীতির মাধ্যমে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সহানুভূতি ও সমর্থন পেতে পারে যা মিয়ানমার-চীনের ওপর চাপ তৈরিতে কিছু ভূমিকা রাখতে পারে।  

৬. ভারত:  মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ কিংবা রোহিঙ্গা-সংকট, দুটির কোনোটিরই কূটনৈতিক ও সামরিক সমাধানের বড় খেলোয়াড় নয় ভারত। এটা চীনের উঠান বলে এখানে ভারতের কিছু করার সামর্থ্য কম। তবে হ্যাঁ, ভারত আরাকানে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক অঞ্চল ও কালাদান বন্দরে বিনিয়োগ থেকে ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক উপযোগিতা নিশ্চিত করতে চায়।

কোয়াডসহ চীনকে ঠেকানোর অপরাপর বিষয়ে ভারত আমেরিকার ছায়ায় কাজ করলেও আরাকান প্রশ্নে ভারতের একটা ভিন্ন দৃষ্টি থাকতে পারে। ভারত চীনকে বিরক্ত করতে চায় ঠিকই, কিন্তু বঙ্গোপসাগরে মার্কিন উপস্থিতি চায় না। মার্কিন দিক থেকে বিষয়টা পরস্পরবিরোধী বলে আরাকান ও রোহিঙ্গা প্রশ্নে ভারতের অবস্থান অস্পষ্ট।  

৭. ইউরোপ: ইউরোপের অবস্থান অনুরোধ এবং পেপারওয়ার্ক-নির্ভর। রোহিঙ্গা গণহত্যার প্রশ্নে ইউরোপ সরব। তারা আমেরিকার পরামর্শেই কাজ করবে, বড়জোর জান্তাকে কিছু অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার পথে হাঁটবে। বান্দরবান সীমান্তে মিয়ানমারের বারবার মর্টার শেল নিক্ষেপসহ, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মাইন পুঁতে রাখা, মর্টার শেল নিক্ষেপে হত্যাসহ সীমান্ত সমস্যার কূটনৈতিক সমাধান খোঁজার চেষ্টা করবে জানিয়ে আসিয়ান ও  আসিয়ানের বাইরের দেশগুলোর রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের জানানো হয় ঢাকা থেকে। কয়েক দিন আগে, কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের প্রতিনিধিরা বান্দরবানে মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি দেখতে গিয়েছেন, জান্তা-আরাকান আর্মি ঠিক ওই মুহূর্তে গোলাগুলি বন্ধ করে, পরে আবারও শুরু করেছে।  

 

৮. আরাকান আর্মি: জান্তাবিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো একে অপরকে সাহায্য করছে বলে মিয়ানমারের বিশাল এলাকা জান্তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এতে আরাকান আর্মিও শক্তি পাচ্ছে। ১৯ সেপ্টেম্বর আরাকান আর্মির মূল রাজনৈতিক সংগঠন ইউনাইটেড লিগ অব আরাকান (ইউএলএ) অনলাইন প্রেস কনফারেন্স করে নাটকীয় এক ঘোষণায় বলেছে, ‘আরাকানের যেকোনো বিষয়ে বৈশ্বিক সবাইকে তাদের সঙ্গে বোঝাপড়ায় আসতে হবে। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে হলে বাংলাদেশ সরকারকে ইউএলএ এবং আরাকান আর্মিকে স্বীকৃতি দিয়ে আলোচনায় বসতে হবে। সে রকম হলে ইউএলএ নিজে থেকে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের একটা রোডম্যাপ প্রকাশ করবে।’ (আলতাফ পারভেজ ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২, প্রথম আলো)। এমতাবস্থায় মার্কিনিরা আরাকান আর্মিকে সাহায্যের পথ খুঁজছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। ইউএলএর ঘোষণাকে মার্কিনিরা মৌন সমর্থন দিলে জান্তাবিরোধী জোট এনইউজে এবং ‘আরাকান আর্মি’ সঙ্গে একটা সমঝোতার আসার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ওপর চাপ  তৈরি হতে পারে। এতে জান্তা ও চীন সমর্থন দেবে না বলে আদতে প্রত্যাবাসন আরও কঠিন হবে। এবং বিষয়টি আরাকানের বিচ্ছিন্নতার প্রশ্ন, অস্ত্র সরবরাহে সহযোগিতা, গোয়েন্দা সাহায্য ইত্যাদি জটিল পরিস্থিতির মধ্যে পড়বে।  

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষাসংক্রান্ত আকসা ও জিসোমিয়া নামে দুটি চুক্তি সই করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। আকসা (অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড ক্রস-সার্ভিসিং অ্যাগ্রিমেন্ট) চুক্তির অধীনে মার্কিন বাহিনী খাদ্য, জ্বালানি, গোলাবারুদ ও সরঞ্জাম বিনিময় হয়ে থাকে। জিসোমিয়া (জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন অ্যাগ্রিমেন্ট) চুক্তির অধীনে হয় সামরিক গোয়েন্দা তথ্যের বিনিময়। অনেকেই মনে করেন, এর সঙ্গে আরাকান বিচ্ছিন্নতার সম্ভাব্য প্রস্তুতির সংযোগ আছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সামরিক আধুনিকায়নে ফান্ডিংয়ের প্রস্তাবও দিয়েছে।

৯. মিয়ানমারে অস্ত্র সরবরাহ: মূলত চীন-রাশিয়া ও এই বলয়ের অনুগত দেশগুলো জাতিসংঘের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মিয়ানমারের জান্তার কাছে অস্ত্র বিক্রি করছে। অস্ত্র বিক্রয়কারীদের তালিকার একেবারে নিচের দিকে ভারত-পাকিস্তানও কিন্তু আছে।

 ১০. জাতিসংঘ: রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘকে নিয়ে এক কথায় যা বলা যায় তা হচ্ছে, এই সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা জাতিসংঘের নেই।  

অনেকের মতে, বাংলাদেশের কূটনৈতিক অবস্থান ও মূল লক্ষ্য এমন হওয়া উচিত যে ‘আরাকানের বিচ্ছিন্নতাকে প্রশ্রয় না দিয়েই অর্থাৎ মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতাকে মেনেই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর স্থায়ী প্রত্যাবাসন ও নিরাপত্তা প্রশ্নে সরাসরি জান্তাকে চাপ দেওয়া। সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া প্রত্যাবাসন না হলে বাংলাদেশ আরাকানের বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকাণ্ডের দায় নেবে না।’ এর জন্য বাংলাদেশকে পর্যাপ্ত গোয়েন্দা ও সামরিক প্রস্তুতি নিতে হবে। চীনকে সাক্ষী রেখে বর্মিজ জান্তার সঙ্গে দর-কষাকষিতে ব্যর্থ হলে বিপদ আরও বড় হবে। বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে একটি সরকারে পক্ষে জোরালো কূটনৈতিক অবস্থান নেওয়া কঠিন। এবং সে কারণেই বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক সক্ষমতা কম, এমনকি কৌশল পশ্চাৎপদ।  

দ্বিতীয় বিষয়টা হচ্ছে, চীনকে মোকাবিলা কিংবা বিরক্ত করতে আমেরিকার সুস্পষ্ট সামরিক আকাঙ্ক্ষাকে বোঝা। ১০ বছর পরে আমেরিকা আরাকানে কোনো সামরিক ভূমিকা নেবে কি না, সেটি বোঝা। এর দুটি মাত্রা রয়েছে। এক. সরাসরি টেবিলের ওপরের কূটনীতি। এখানে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রশ্নে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বেকায়দায় রয়েছে। র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তারা সরকারকে চাপে রেখেছে। ফলে গণতন্ত্র উন্মুক্ত করা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নত করে দর-কষাকষির শক্তি বাড়ানো ছাড়া সরকারের সামনে বিকল্প কম। অন্যথায় করতে হবে টেবিলের নিচের কূটনীতি।

মার্কিনিদের সঙ্গে যত বেশি আন্ডার-টেবিল ডিল হবে, মূল লক্ষ্য থেকে বাংলাদেশ তত বেশি সরে যাবে। ভাসানচর, আকসা-জিসোমিয়ার চাপ, মার্কিন অস্ত্র বিক্রির প্রস্তাব এবং আরাকান আর্মির ব্যবহৃত অস্ত্রের প্রকৃতি নির্ণয় করে এই আকাঙ্ক্ষা বুঝতে হবে। ঘটমান বর্তমান থেকে কয়েক বছর পরে আরাকানে মার্কিন সামরিক আকাঙ্ক্ষা আছে কি না, কিংবা আরাকান আর্মির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কোনো ছায়াযুদ্ধ করবে কি না, এটা বোঝা জরুরি।  

Like
12
البحث
الأقسام
إقرأ المزيد
Health
How Stratos Male Enhancement Is Enhancing Male's Performance And Overall Vigor?
Stratos Male Enhancement Spray is a potent male enhancement formulation aimed at improving...
بواسطة Nexagen Male Enhancement 2025-02-26 17:36:46 0 798
Health
The Role of Generic Abiraterone Manufacturers in Promoting Daily Health and Wellness
Abiraterone acetate is a vital medication primarily used in the treatment of prostate cancer. By...
بواسطة Sara Davis 2024-09-30 05:56:50 0 4كيلو بايت
أخرى
Exploring the Benefits of Working with a Leading Concrete Block Company in Bangladesh
As Bangladesh’s construction industry continues to grow, builders and developers are...
بواسطة Mir Concrete Block 2024-10-14 10:00:31 0 4كيلو بايت
Shopping
Golden Goose Sneakers Sale out call for metallic pairs from and
Still, both dresses underscore the codes of the singer era and sexy. You know what they say If it...
بواسطة Janiyah Henderson 2024-06-05 05:56:03 0 6كيلو بايت
أخرى
Stylish Sirphire Mobile Covers for iPhone 15 & iPhone 11: Trendy Designs
When it comes to mobile phone accessories, one of the most sought-after items is a stylish and...
بواسطة Mobile Cover 2025-01-29 10:09:24 0 4كيلو بايت