বিদেশে আয়ের তথ্য গোপন করেছেন আইনজীবী এবং গণফোরামের একাংশের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। সে তথ্য খুঁজে বের করেছেন আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা। 

ড. কামাল হোসেন ও তার মেয়ে সারা কামালের বিদেশে কাজ করে পাওয়া আয় দেখানো হয়নি তার আয়কর রিটার্ন প্রতিবেদনে বা হাইকোর্টে দাখিল করা প্রতিবেদনে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেছেন, ড. কামালকে তার সম্পদের তথ্য গোপনের কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে। 

ড. কামাল ও তার মেয়ে সারার বিরুদ্ধে প্রায় সাত কোটি টাকা আয়ের তথ্য গোপনের বিষয়টি বিচারাধীন রয়েছে উচ্চ আদালতে।

রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, দেশ-বিদেশে সব আয়ের তথ্য রিটার্নে উল্লেখ করতে হবে। যে দেশের আয় সেই দেশে কর দেয়া হলে, দ্বিতীয়বার কর নেয়া হবে না।

যদিও নথি ঘেটে দেখা যায়, ২০১৯ সালে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও তাঞ্জানিয়ার মধ্যে একটি সালিস নিস্পত্তি করে ড. কামাল হোসেন আড়াই লাখ ডলারের বেশি আয় করেছেন। 

কামাল হোসেনের সাথে করা চুক্তিনামায় লেখা আছে, তার আয়ের কর দিতে হবে নিজ দেশে।

রাজস্ব বোর্ডের অনুসন্ধানে এই টাকার তথ্য মিলেছে। কামাল এন্ড এসোসয়িটসের ৫০ শতাংশের অংশীদার ড. কামাল হোসেন ও ২০ শতাংশের অংশীদার তার মেয়ে সারা কামাল। 

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের মতিঝিল শাখায়  ড. কামাল হোসেন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস নামে থাকা অ্যাকাউন্টটির কথা আয়কর বিবরণীতেই গোপন করেছেন।

অথচ অ্যাকাউন্টটিতে ২০১২ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত জমা হয়েছে ৫৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। শুধুমাত্র ২০১৭ সালে এক বছরে জমা হয়েছে ১১ কোটি ১২ লাখ টাকা।

এ অবস্থায় ড. কামাল হোসেনকে আয়কর পরিশোধের জন্য চিঠি দেয় এনবিআর। তবে আয়কর না দিয়ে উল্টো সংশ্লিষ্ট যুগ্ম কমিশনারের কাছে আপিল করেন ড. কামাল হোসেন।

২০২০ সালের ২৫ জুন খারিজ হয়ে যায় ড. কামালের আপিল। জানানো হয়, আয়কর পরিশোধ করতেই হবে তাকে। কিন্তু এবারও নারাজ ড. কামাল। 

তিনি কর আপিল ট্রাইব্যুনালে গেলে, সেখান থেকেও জানিয়ে দেয়া হয় কর পরিশোধ করতেই হবে। এরপর কর পরিশোধের বদলে, ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধেই হাইকোর্টে রিট করেন ড. কামাল। যা এখন শুনানির অপেক্ষায় আছে। 

এর আগে ২০১৮ সালের ১৯ নভেম্বর ড. কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে আয়কর ফাঁকির অভিযোগ আমলে নিয়ে তা খতিয়ে দেখতে এনবিআরকে চিঠি দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন। 

চিঠিতে দুদক জানায়, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে একাউন্টের অর্থ আয়কর নথিতে দেখাননি ড. কামাল। গত ৯ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি জানান এনবিআর চেয়ারম্যান।

এদিকে, আন্তর্জাতিক মানের আইনজীবী ড. কামাল হোসেন ও তার প্রতিষ্ঠান বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেসব প্রতিষ্ঠানকে আইনি সহায়তা দিচ্ছেন সেই তালিকাও পেয়েছে এনবিআর। 

এবার খতিয়ে দেখা হচ্ছে, আয়ের সাথে রির্টানে দেয়া তথ্যের গড়মিল কতোটুকু। এই বিষয়ে কথা বলতে যোগাযোগ করা হলে সাড়া দেননি জেষ্ঠ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন।

 

- ফারজানা রূপা, একাত্তর