মোজো-কোক-পেপসি’র ইস্যু
Posted 2024-06-11 03:54:39
0
7K

কোক-পেপসি’র বাংলাদেশে বিরাট বড় বাজার। কোকের ব্যবসা চলছে প্রায় ৬০ বছর ধরে, পেপসির প্রায় ২৫ বছর। বাংলাদেশে কোমল পানীয়’র বাজারে তারা মাফিয়ার মতো। দেশীয় বা বিদেশী, অন্য কোনো বেভারেজ ব্র্যান্ডকেই তারা এ দেশে টিকতে দেয় না। তাদের মার্কেটিং আর ব্র্যান্ডিং পলিসি এত স্ট্রং, অন্য কোনো ব্র্যান্ডকে তারা তাদের সাম্রাজ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেই দেয় না। এর বহু উদাহরণ রয়েছে।
আমি সাম্প্রতিক দুটো উদাহরণ দেই।
এক
ফিলিস্তিন ইস্যু নিয়ে যখন কোক-পেপসি বয়কটের ঢেউ উঠল বাংলাদেশে, তখন ‘মোজো’ হঠাৎ করে ফিলিস্তিনের প্রতি নিজেদের সহমর্মিতা স্বরূপ ঘোষণা দিল, তারা প্রতি বোতল থেকে এক টাকা করে ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মানুষের জন্য পাঠাবে। অল্প দিনেই মোজোর এই প্রচারণা ব্যাপক সমর্থন পায় এবং মোজোর বিক্রি হু হু করে বাড়তে থাকে।
যেখানে কোক-পেপসি বেভারেজ মার্কেটের ৮০-৯০% দখল করে রেখেছিল, আর বাকি ১০-২০% মার্কেট ছিল বাকি সব বেভারেজের, সেখানে মোজো মাত্র দুই-তিন মাসে সেই মার্কেটের ৩৫-৪০% দখল করে ফেলে। এবং দিন দিন এই মার্কেট রেশিও বাড়তে থাকে।
মার্কেট চাহিদা বাড়ার কারণে মোজো পড়ে যায় উৎপাদন সমস্যায়। কারণ মোজোর ফ্যাক্টরি ক্যাপাসিটি তো এত বিশাল নয় যে কোক-পেপসির বিরাট মার্কেটকে চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে। ফলে মোজো দ্রুত ‘দেশীয় একটি বেভারেজ কোম্পানি’র সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির ভিত্তিতে তাদের ফ্যাক্টরিতে মোজোর ইনগ্রিডিয়েন্টস (কাঁচামাল) উৎপাদন শুরু করে। মোজো সারা বাংলাদেশের ব্যাপক চাহিদা শতভাগ পূরণ করতে না পারলেও, এই ‘দেশীয় বেভারেজ কোম্পানি’র ফ্যাক্টরি সাপোর্টে বেভারেজ মার্কেটে নিজেদের আধিপত্য জোরদার করতে থাকে।
কিছুদিন যাওয়ার পর হঠাৎ এই ‘দেশীয় কোম্পানি’ থেকে মোজোকে জানানো হয়, তারা তাদের ফ্যাক্টরিতে আর মোজোর ইনগ্রিডিয়েন্টস উৎপাদন করবে না। কেন? সেই কেন’র কোনো জবাব নেই। বালেগ ব্যক্তি মাত্রই এর কারণ অনুধাবন করতে পারবেন। আর এই ‘দেশীয় বেভারেজ কোম্পানি’টি বাংলাদেশের যেন তেন কোনো কোম্পানি নয়, বাংলাদেশের টপ ফাইভের একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি। শত শত প্রোডাক্ট আছে তাদের। নাম বলছি না। বাংলাদেশ ছাড়াও তাদের প্রোডাক্ট বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশে এক্সপোর্ট হয়।
তো, এই সিচুয়েশনে এসে মোজো পড়ে যায় দারুণ গ্যাঁড়াকলে। একদিকে পানীয়’র ব্যাপক চাহিদা, আর ওদিকে তাদের উৎপাদনে ঘাটতি। ফলে মার্কেটে পড়তে থাকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। চারদিকে মোজো মোজো বলে হাহাকার। তাছাড়া নানা জনের নানা বিরূপ মন্তব্য তো আছেই! মোজোকে নিয়ে তৈরি হয় নানা রিউমার, নানা কন্সপিরেসি থিউরি।
তাই বলে মোজো বসে থাকেনি। মোজো তাদের ফ্যাক্টরি ক্যাপাসিটি বাড়াতে ত্বরিত জার্মানির সঙ্গে যোগাযোগ করে। ফ্যাক্টরি মেশিনারিজে বিশ্বে সবচেয়ে আধুনিক ও টেকসই প্রযুক্তির মেশিন সাপ্লাই দেয় জার্মান কোম্পানি। তাদেরকে রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী মেশিন তৈরির অর্ডার দেয়া হয়। কেননা এসব মেশিন ইন্সট্যান্ট কেনা যায় না। অর্ডার করার পর সেটা কোম্পানির রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী বিভিন্ন ধাপে কাস্টমাইজ করে তৈরি করতে হয়। বেভারেজ তৈরির একটি মেশিন তৈরিতে ব্যয় হয় ২০০-২৫০ কোটি টাকা।
মোজোর এই মেশিন জার্মানিতে তৈরি হয়ে শিপমেন্টে বাংলাদেশে আসতে এবং সেটি ফ্যাক্টরিতে ইন্সটল করতে সময় নেয় আরও দুই-তিন মাস। এই বিরাট কর্মযজ্ঞ শেষ করে মোজো দ্রুত তার নতুন উৎপাদনে ফিরে আসছে।
দুই
মোজোকে মার্কেট-আউট দেখাতে কোক-পেপসি এখন একযোগে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। বেভারেজ কোম্পানিগুলো তাদের প্রোডাক্ট ফ্রিজিং করতে নিজেরাই দোকানদারদের জন্য ফ্রিতে ফ্রিজ প্রোভাইড করে। যাতে এই ফ্রিজে দোকানীরা এসব কোম্পানির বেভারেজগুলো রাখতে পারে। কোক যেমন তার কোকাকোলা, মিরিন্ডা, কিনলে ইত্যাদি প্রোডাক্ট রাখার জন্য ফ্রিজ দেয়, তেমনি পেপসিকো তাদের পেপসি, ফান্টা, অ্যাকুয়াফিনা রাখার জন্য ফ্রিজ দেয়। তবে শর্ত থাকে, এসব ফ্রিজে দোকানীরা অন্য কোম্পানির প্রোডাক্টও রাখতে পারবে বটে, কিন্তু তাদের কোম্পানির প্রোডাক্টগুলো দর্শনীয়ভাবে রাখতে হবে এবং প্রতি মাসে তাদের নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রোডাক্ট বিক্রি করতে হবে।
বিগত কয়েক মাস ধরে কোক-পেপসি সম্মিলিতভাবে তাদের ডিলার, হোলসেলার ও ডিস্ট্রিবিউটরদের বলে দিয়েছে, যে দোকানে আমাদের ফ্রিজ রয়েছে, সেই ফ্রিজে দোকানদার অন্য সব সফট ড্রিংকস রাখতে পারবে কিন্তু মোজো রাখা যাবে না। কোকের ফ্রিজে পেপসি রাখো, পেপসির ফ্রিজে কোক রাখো, সমস্যা নেই, কিন্তু কোক-পেপসির প্রোভাইড করা কোনো ফ্রিজে মোজো রাখা যাবে না।
এখন মোজোর পক্ষে তো হুট করে সারা বাংলাদেশে লাখ লাখ দোকানে ফ্রিজ প্রোভাইড করা সম্ভব না। কাজেই মোজোকে থাকতে হবে ফ্রিজের পেছনে বা তাকের পেছনের গোডাউনে। ফলে দেখা যায়, অনেক দোকানদার ফ্রিজিং করতে না পারার কারণে মোজোর চাহিদা কমিয়ে দিয়েছে।
তারপরও বহু দোকানদার ফিলিস্তিনকে ভালোবেসে বা দেশীয় প্রোডাক্টের প্রসারে মোজোকে ফ্রিজে জায়গা করে দিচ্ছে, নয়তো ফ্রিজ ছাড়াই বিক্রি করে চলেছে।
পরিশেষ
গত মাসে আকিজ ভেঞ্চার লিমিটেড-এর (মোজোর মাদার কোম্পানি) পক্ষ থেকে আমাদের তিন দিনের একটি ওরিয়েন্টেশন ছিল। ওরিয়েন্টেশনের শেষদিন ছিল মার্কেট রিসার্চ। যার যার এলাকার বাজারে গিয়ে বিভিন্ন দোকানে আকিজের প্রোডাক্ট সম্পর্কে দোকানীদের কী মতামত সেটা জানা ও নোট করা। এই মার্কেট রিসার্চ প্রোগ্রামে গিয়েই আমার কয়েকজন কলিগ এমন তথ্য জানতে পারেন।
তা ছাড়া মোজোকে নিয়ে নানা ধরনের অপপ্রচার ছড়ানোর চেষ্টা তো আছেই। অনলাইনে মোজোকে নিয়ে বহু গুজব ঘুরতে দেখবেন। এসব গুজব মোবিলাইজ কারা করছে, আমাদের বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
আগেই বলেছিলাম, কোক-পেপসি হলো আমাদের দেশের বিরাট বিরাট ব্যবসায়ী মাফিয়া। এরা আপনার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বলবে না যে কোক খাও। এরা এদের মার্কেট পলিসিকে এমনভাবে প্রয়োগ করবে, আপনার তখন কোক খাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। হয়তো কোক খাও, নয়তো সফট ড্রিংকস না খেয়ে থাকো। কিন্তু বিরিয়ানী খাওয়ার পর ঠাণ্ডা খেতে চাইলে তোমাকে কোক খেতেই হবে বাছা! উপায় নাই!!
এটাই ওদের মাফিয়া স্ট্র্যাডেজি। এখন আপনি আমি মোজোকে নানাভাবে কটাক্ষ করতে পারি, নানা কন্সপিরেসি থিউরিতে বিশ্বাস করতে পারি, মোজোর ব্যাপারে গুজব-সত্য নানা কথায় দোষ ধরতে পারি; কিন্তু মনে রাখতে হবে, মোজো কর্পোরেট সকল আশংকা আর ভয়কে তুচ্ছ করে একাই দাঁড়িয়েছিল এই মাফিয়াদের বিরুদ্ধে। লাখো-কোটি তরুণের প্রাণের আওয়াজের প্রতিনিধিত্ব করেছিল তাদের উদ্যোগ। সুতরাং এত সহজে তারা ময়দান থেকে পিছু হটবে না।

Cerca
Categorie
- Art
- Causes
- Crafts
- Dance
- Drinks
- Film
- Fitness
- Food
- Giochi
- Gardening
- Health
- Home
- Literature
- Music
- Networking
- Altre informazioni
- Party
- Religion
- Shopping
- Sports
- Theater
- Wellness
Leggi tutto
Zentra Slim 캡슐 (KR) - 지속 가능한 체중 감량과 지방 연소의 비결
ZentraSlim Korea는 시중에 판매되는 수많은 체중 감량 제품 중 하나입니다. 성분, 비용, 효능 및 이점에 대한 통찰력을 얻는 것이...
Frank Frey CBD UK: How It Works, Its Uses, and Pricing in UK {Buy Now}
In an environment where tension and unease appear to be persistent adversaries, discovering...
ওয়েবসাইট থেকে আয় করার ৬ উপায়
ওয়েবসাইট তৈরি করে তা থেকে বিভিন্ন উপায়ে আয় করা যায়। ওয়েবসাইট তৈরির পর সেটির মাধ্যমে কীভাবে আয়...
GlucoTonic USA, CA, UK, AU, NZ, FR: How to Use It for Best Results
Introduction
GlucoTonic is a dietary supplement designed to help regulate blood sugar...
Why Anavar 50mg is a Popular Choice for Bodybuilders in the UK
Anavar, known by its chemical name Oxandrolone, has earned a solid reputation as one of the most...