বাইডেনের গালে মোহাম্মদ বিন সালমানের ‘চড়’ কী প্রভাব ফেলতে পারে

0
5K

সৌদি যুবরাজ, প্রধানমন্ত্রী এবং কার্যত শাসক মোহাম্মদ বিন সালমান (সাধারণভাবে এমবিএস বলে পরিচিত) যে বাইডেনের গালে চড় মেরেছেন, এটা রাখঢাক ছাড়াই বলছে প্রতিষ্ঠিত অনেক পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম। আক্ষরিকভাবেই অনেক খবরে, মতামতে ‘স্ল্যাপ’ শব্দটি ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ফল কী হবে, বাইডেনের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, সেটা নিয়েও চলছে অনেক বিশ্লেষণ। আর বলা বাহুল্য, এমন একটা ঘটনার প্রভাব পড়বে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই।

সম্প্রতি ওপেক প্লাসের অপরিশোধিত তেল উৎপাদন হ্রাসের (প্রতিদিন ২০ লাখ ব্যারেল) সিদ্ধান্তের খবর আমাদের অনেকের চোখে পড়েছে নিশ্চয়ই। এ সিদ্ধান্তকে শুধু তেলের ভবিষ্যৎ মূল্যবৃদ্ধি বা হ্রাসের প্রেক্ষাপটে দেখলে ভুল হবে; এর সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক তাৎপর্য আছে। সে বিশেষণে যাওয়ার আগে আমাদের জানা প্রেক্ষাপটটা সংক্ষেপে একটু বলে নিই।

একটা বৈশ্বিক মন্দা অনিবার্য, এটা নিয়ে এখন বিতর্ক নেই প্রায়। বিতর্ক হচ্ছে মন্দাটির স্থায়িত্ব এবং এর তীব্রতা কতটা হবে, সেটা নিয়ে। মন্দা শুরু হয়ে গেলে সব সংকটের মধ্যে একটা আশার কথা বিশ্ববাসীর জন্য থাকতে পারত। সেটা হচ্ছে মন্দায় বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শ্লথ হয়ে যাওয়ার কারণে তেল-গ্যাসের মতো প্রাথমিক জ্বালানির চাহিদা কমে যাওয়া। প্রাথমিক জ্বালানির চাহিদা কমে যাওয়া মানে এর দাম কমা। আর জ্বালানির দাম কমার সূত্রে অন্য সব পণ্য-সেবার উৎপাদন মূল্য ও পরিবহন খরচ কমলে বিশ্বব্যাপী চলা ভয়ংকর মূল্যস্ফীতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসার কথা।

বিশ্বে তেল রপ্তানিকারক ১৩টি দেশের সংগঠন ওপেক কাজ করছে ১৯৬০ সাল থেকেই। সংগঠনটি তখন থেকেই বিশ্বে তেলের সরবরাহ বৃদ্ধি ও কমানোর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী তেলের মূল্যের ওপর একধরনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। সংগঠনটি আরও বেশি প্রভাবশালী হয়ে ওঠে ২০১৬ সালে, যখন এর সঙ্গে আরও ১২টি তেল উৎপাদনকারী ও রপ্তানিকারক দেশ যুক্ত হয়ে তৈরি হয় ওপেক প্লাস। এর মধ্যে আমাদের এ আলোচনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ওপেক প্লাসের সদস্যদেশটির নাম রাশিয়া। পুরো সংগঠনে সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরব।

এ দেশের প্রভাবেই সংগঠনটির অনেক সিদ্ধান্ত নির্ভর করে। তাই পুতিনের ইউক্রেন আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই ইউরোপ খুব চেষ্টা করেছে যাতে সৌদি আরবকে খুশি করে বিশ্বব্যাপী তেলের সরবরাহ বাড়িয়ে তেলের দাম কমিয়ে আনা যায়।

সরবরাহ বাড়িয়ে তেলের দাম কমানো গেলে অনেক সুবিধা হতে পারত। করোনার কারণে বাজারে অর্থ সরবরাহ বৃদ্ধি এবং সাপ্লাই চেইনের ভঙ্গুরতার কারণে সারা পৃথিবীতে যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে, সেটার লাগাম টেনে ধরা যেত। এর সঙ্গে জড়িত ছিল আরও একটা খুব বড় ভূরাজনৈতিক স্বার্থও। তেলের দাম কমিয়ে আনা গেলে সেটা রাশিয়ার অর্থনীতিতে একটা বড় চাপ তৈরি করত, যা যুদ্ধকে অর্থায়ন করতে পুতিনকে সমস্যায় ফেলত।

একটা তথ্য জেনে রাখলে আমরা বুঝব, তেলের দাম কমলে রাশিয়া কতটা বিপদে পড়তে পারত। রাশিয়া বর্তমানে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মূল্যছাড়ে চীন ও ভারতের কাছে বিরাট পরিমাণ তেল বিক্রি করছে। এভাবে তেল বিক্রি করে মোটামুটি লাভ করার জন্য অপরিশোধিত তেলের প্রতি ব্যারেলের মূল্য ১০০ ডলারের আশপাশে থাকা রাশিয়ার জন্য জরুরি। কারণ, তাতে রাশিয়া ৬০ ডলারের মতো মূল্যে এই তেল রপ্তানি করতে পারবে।

উৎপাদনগত পদ্ধতির জটিলতা, দুর্নীতি ইত্যাদি মিলিয়ে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেল উৎপাদনে রাশিয়ার খরচ ৪৫ ডলারের মতো। অর্থাৎ তেলের দাম যদি ৬০ থেকে ৭০ ডলারের দিকে চলে আসে, তাহলে এক-তৃতীয়াংশ ডিসকাউন্ট দিয়ে রাশিয়ার পক্ষে লাভ করা আর সম্ভব হবে না। অর্থাৎ তেলের সরবরাহ বাড়িয়ে এর মূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো গেলে সেটা রাশিয়ার ওপর প্রচণ্ড অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করত।

সৌদি আরবের ডি ফ্যাক্টো শাসক মোহাম্মদ বিন সালমানকে রাজি করানোর জন্য পশ্চিমা দেশগুলো খুব দীর্ঘ চেষ্টা করেছে। ইউক্রেন আগ্রাসনের পর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সৌদি আরবে গিয়ে এমবিএসের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন। এরপর গেছেন অন্য নেতারাও। ফ্রান্স তাঁকে দাওয়াত করে নিয়ে গিয়ে অনেক আদর-আপ্যায়ন করেছিল। অল্প কিছুদিন আগে জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ গিয়েছেন সৌদি আরবে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত সফরটি, বলা বাহুল্য, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের।

পরিবারের ভেতরে একধরনের রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এমবিএস ক্রাউন প্রিন্স হয়ে যাওয়ার পর থেকেই নানা দেশে অস্বস্তি ছিল। এরপর তাঁর কিছু কাজ সারা পৃথিবীতে, বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বে প্রচণ্ড সমালোচনা তৈরি করে। ইয়েমেন আক্রমণ করে অসংখ্য বেসামরিক মানুষকে হতাহত করা এবং সেখানে একটা দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করার জন্য তিনি সমালোচিত হয়েছেন, হচ্ছেন এখনো। সৌদি রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ এবং রাজপরিবারের অনেক বিব্রতকর গোপন তথ্য ফাঁসকারী জামাল খাসোগিকে তুরস্কে অবস্থিত সৌদি কনস্যুলেটে হত্যা করার পর এমবিএস বিশ্বব্যাপী তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন।

সে সময় জো বাইডেনের ক্ষমতায় ছিলেন না, কিন্তু এ ঘটনায় তিনি তীব্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছিলেন। এমনকি প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও বাইডেন এমবিএসের প্রতি তাঁর বিরক্তি লুকাননি। কিন্তু সব রকম সমালোচনার ঝুঁকি মাথায় রেখে বাইডেন গিয়েছিলেন সৌদি আরবে। মুহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে ফিস্ট বাম্প করেছিলেন প্রকাশ্যে এবং বৈঠক করেছিলেন। মুখে নানা কূটনৈতিক বচন থাকলেও বৈঠকটি যে ছিল বৈশ্বিক জ্বালানি তেল সরবরাহ বৃদ্ধির এক মরিয়া চেষ্টা, সেটা কাউকে আর বলে দিতে হয়নি।

নিজ দেশে মধ্যবর্তী নির্বাচনের বিষয় তো আছেই, জ্বালানি তেলের অতি উচ্চ মূল্যজনিত বৈশ্বিক সংকট যতটুকু কমানো সম্ভব, সে চেষ্টা তিনি করেছেন। আর সর্বোপরি রাশিয়াকে সংকটে ফেলার অতি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য তো ছিলই। কিন্তু বৃথা গেল সব চেষ্টা।

সৌদি আরবের হাতে আছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কৌশলগত পণ্যটির নিয়ন্ত্রণ। তাই সৌদি আরব ভাবছে, এ পণ্যের অধিকার তাকে যাচ্ছেতাই করার ক্ষমতা দেয়। সৌদি আরব জানে তেলের সরবরাহ কমিয়ে ফেলার পরিপ্রেক্ষিতে আমেরিকা যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেগুলো স্বল্প মেয়াদে কোনোভাবেই কার্যকর হবে না।

আমেরিকা নিজের কৌশলগত রিজার্ভ থেকে তেল বাজারে ছাড়ছে, যা মোটেও টেকসই পদ্ধতি নয়। এ ছাড়া ভেনেজুয়েলার ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার শর্তে ভেনেজুয়েলার তেল বাজারে আনার চেষ্টা হচ্ছে। বিশ্বের তেলের অন্যতম সর্বোচ্চ রিজার্ভ থাকা একটি দেশ হলেও দীর্ঘদিন বসে থাকার কারণে ভেনেজুয়েলার তেল উৎপাদন এবং সরবরাহ অবকাঠামো একেবারেই ভঙ্গুর হয়ে আছে। সেগুলো ঠিকঠাক করে উত্তোলন করে বাজারে সরবরাহ করতে বেশ খানিকটা সময় লেগে যাবেই।

সার্বিক পরিস্থিতিতে এমবিএসের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তটিকে যৌক্তিকভাবেই রাশিয়ার জয় হিসেবে দেখছেন সবাই। এটা ঠিক আছে, কিন্তু আমার বিশ্বাস, সৌদি আরব আমেরিকার পক্ষ না নেওয়ার পেছনে আছে অন্য কারণও।

এমবিএসের সঙ্গে ব্যক্তিগত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল জ্যারেড কুশনারের। ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাই কুশনারের ট্রাম্প প্রশাসনে অফিশিয়ালিই ছিলেন, কিন্তু তাঁর অলিখিত ক্ষমতা ছিল তারচেয়ে ঢের বেশি। এমবিএস অসাধারণ নিরাপদ সময় কাটিয়েছিলেন ট্রাম্পের সময়ে। যে খাসোগিকে নিয়ে ইউরোপের অনেক দেশ কিংবা বাইডেন তাৎক্ষণিকভাবে কঠোর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন, তখন ট্রাম্প প্রশাসন এ জঘন্য কাজের বিরুদ্ধে ছিল অনেকটা নমনীয়।

শুধু সেটা নয়, বিখ্যাত আমেরিকান সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড ট্রাম্পের শাসনকাল নিয়ে তাঁর লেখা বই ‘রেইজ’-এ দাবি করেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প এমবিএসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমেরিকার অভ্যন্তরীণ ক্ষমতাকাঠামোর প্রচণ্ড চাপ থেকে তিনি এমবিএসকে বাঁচিয়েছিলেন।

এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়, আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প যদি আবার জিতে আসেন, তাহলে সেটাই হবে এমবিএসের মতো শাসকদের জন্য কৌশলগতভাবে অনেক বেশি সুবিধাজনক। তাই নভেম্বরে আমেরিকার মধ্যবর্তী নির্বাচনে বাইডেনকে বিপদে ফেলে তাঁর সমর্থন কমানোর মাধ্যমে নির্বাচনে ট্রাম্পকে নিয়ে আসার একটা উদ্দেশ্য থাকতে পারে এ পদক্ষেপের পেছনে।

বলা বাহুল্য, সৌদি আরবের আচরণে মার্কিন রাজনৈতিক মহল (বিশেষ করে ডেমোক্রেটিক) প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। তাঁরা সৌদি আরবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছেন। বাইডেন নিজেও তেমন কথা বলেছেন। অ্যান্টিট্রাস্ট অবস্থান দেখিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় ওপেককে চাপ দেওয়া, ওপেক ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করা, সৌদি আরবের জাতীয় নিরাপত্তা থেকে নিজেদের সরিয়ে আনাসহ নানা রকম পদক্ষেপের আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু আমি মনে করি, বোধগম্য কারণেই আরেকটা অপশন প্রকাশ্যে আলোচনা করা হচ্ছে না। সেটা হচ্ছে এমবিএসকে ক্ষমতাচ্যুত করা।

ক্ষমতায় আসার পর থেকে এমবিএস সৌদির অতি প্রভাবশালী ধর্মীয় গুরুদের বিরুদ্ধে গিয়ে নানা রকম সংস্কার আনছেন, যা প্রবীণদের অনেককে ক্ষুব্ধ করলেও খুশি করছে তরুণদের। তাই আমার অনুমান, সেখানে একটা শক্তিশালী গণ-আন্দোলনের পরিস্থিতি নেই। কিন্তু মোহাম্মদ বিন নায়েফকে ক্রাউন প্রিন্সের পদ থেকে সরিয়ে নিজে ক্ষমতা নেওয়ার পথে রাজপরিবারের অনেক সদস্যের ওপর আটক করা থেকে শুরু করে, মোটা আর্থিক জরিমানাসহ নানা রকম নিপীড়নের ইতিহাস আছে।

এ কারণে রাজপরিবারের ভেতরেই এমবিএসের অনেক বিরুদ্ধাচারী আছেন। সেই অংশের সঙ্গে কাজ করে তাঁকে সরানোর একটা চেষ্টা হতে পারে মার্কিনদের দিক থেকে। চড়ের সবচেয়ে কার্যকর পাল্টা পদক্ষেপ হতে পারে এটাই।

সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পর বাইডেনের সঙ্গে এমবিএসের সমস্যা একেবারে ব্যক্তিগত পর্যায়ে চলে গেছে মনে হয়। তাই আপাতত এই দুজনের মধ্যে একটা কাজের চলনসই সম্পর্ক থাকা সম্ভব নয় বলেই মনে হয়। আর পুতিনের ইউক্রেন আগ্রাসনের পর সৌদির মতো দেশ পশ্চিমাদের সঙ্গে না থাকার বার্তা খুব স্পষ্ট। পশ্চিমারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছে সেটা, বাইডেন তো পারছেনই। চড়টা খেয়েছেন তো তিনিই।

  • জাহেদ উর রহমান ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের শিক্ষক

Like
Love
12
Sponsored
Search
Categories
Read More
Other
CorteizCargo Fashion, The Next Big Trend in Streetwear
CorteizCargo Fashion, The Next Big Trend in Streetwear. Streetwear has for a long while been a...
By Ellen Green 2024-09-30 12:40:29 0 8K
Uncategorized
টুইটারের ভারত অফিসের ৯০ শতাংশেরও বেশি কর্মী চাকরিচ্যুত
টুইটারে কর্মীদের গণছাঁটাই করছেন প্রতিষ্ঠানটির নতুন মালিক ইলন মাস্ক। তিনি প্রতিষ্ঠানটির ভারত...
By Somoy Television 2022-11-08 01:08:37 0 4K
Other
Aelfric Eden A New Era in Streetwear Fashion
Aelfric Eden, a California-based streetwear brand founded in 2014, has emerged as a significant...
By Stussy Apperal 2024-11-03 19:29:23 0 3K
Fitness
How Fairy Bread Farms Further develop Your Rest Quality?
The Fairy Farms Hemp Gummies AU Studies give you a striking and helpful philosophy for...
By Nexagen Male Enhancement 2024-12-28 04:36:28 0 1K
Networking
SEO Score: A Comprehensive Guide
SEO Score: A Comprehensive Guide to Your Website's Health In today's digital age, a strong...
By Linux Help BD 2024-11-21 12:40:43 0 4K